মুসলমানদের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হজ বেশ কয়েকবছর শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবশেষ ২০২২ সালে শুক্রবারে হজ অনুষ্ঠিত হয়। তবে জুমার দিনে আরাফার দিন হলে সেই হজের আলাদা ফজিলত রয়েছে বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, যাকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করে থাকেন আলেমরা। বরং যে বর্ণনার আলোকে এ কথা বলা হয়, সেটি জাল ও ভিত্তিহীন।
বর্ণনা অনুযায়ী, আরাফার দিন জুমার দিনের সঙ্গে মিলে গেলে তা ৭০টি হজের চেয়েও উত্তম। (সিলসিলা জয়িফা: ১১৯৩) তবে এ সূত্রকে দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন অধিকাংশ আলেম সমাজ।
সাহেবে তুহফা হুঁশিয়ার করে বলেন, শুক্রবারে হজ হলে তাকে ‘আকবরি হজ’ বলে সমাজে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তা ভিত্তিহীন’ (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৪/২৭ হা/৯৫৮-এর ব্যাখ্যা)। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘এটি একটি বাতিল কথা, এর কোনো ভিত্তি নেই। রাসুলুল্লাহ (স.), সাহাবা-তাবেয়িন কারও থেকেই এ ধরনের কথা প্রমাণিত নয়।’ (ফয়জুল কাদির: ২/২৮)
সুরা তাওবায় উল্লেখিত ‘হজে আকবর’-এর অর্থ কারো মতে আরাফার দিন, আবার অধিকাংশের মতে, এর অর্থ কোরবানির দিন। কেননা রাসুল (স.) হজ পালনকালে কোরবানির দিনকে ‘হজে আকবর’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। (বুখারি:১৭৪২, আবু দাউদ: ১৯৪৫, মেশকাত: ২৬৭০)
জুমার দিনে আরাফার যে কোনো মর্যাদা নেই—এমনটিও নয়। শায়খ উসাইমিন (রহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- এ ব্যাপারে নবী (স.) থেকে কিছু বর্ণিত আছে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, জুমার দিন হজ হওয়ার ফজিলত সম্পর্কে নবী (স.) হতে কিছু বর্ণিত নেই। তবে আলেমগণ বলেন, জুমার দিনে হজ্জ হওয়াটা উত্তম।
কেননা এই হজ নবী (স.)-এর হজের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ নবীজির আরাফায় অবস্থান ছিল জুমার দিনে। তাছাড়া জুমার দিনে এমন একটি সময় থাকে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে সেটি কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত। এছাড়া আরাফার দিন ঈদ এবং জুমার দিনও ঈদ; সুতরাং দুই ঈদ একত্র হওয়া কল্যাণকর। পক্ষান্তরে যা মশহুর হয়ে গেছে যে, জুমার দিনে হজ ৭০টি হজের সমান- গাইরে সহিহ (আললিকা আশশাহরি: ৩৪/১৮)
এমআই