ক্যাটাগরি: ধর্ম ও জীবন

কোরবানির পশুতে শরিকের বিধান

কোরবানি শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য নিয়তে কোরবানি করলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। একটি পশু একজনে কোরবানি দেওয়া যাবে, গরু, মহিষ ও উটে শরিকে দেওয়া যাবে। তবে শরিকি কোরবানির ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কোন পশু ক’জন মিলে কোরবানি দিতে পারবে?
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শুধু একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে। এমন একটি পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করলে কারও কোরবানিই হবে না। উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারও কোরবানিই হবে না। (ফতোয়ায়ে কাজিখান, ৩/৩৪৯; বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৭-২০৮)

জাবের (রা.) বলেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বের হলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে একটি গরু এবং একটি উটে সাতজন করে শরিক হওয়ার নির্দেশ করলেন। (মুসলিম, ১৩১৮/৩৫১)

শরিকানায় অংশ ও শরিকদের যেমন হওয়া চাই
সাতজনে মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। (যেমন, কারও আধা ভাগ, কারও দেড় ভাগ)। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি সঠিক হবে না। তেমনিভাবে কোরবানি করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকা দিয়ে কোরবানি করা সঠিক নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য শরিকদের কোরবানিও আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৭)

শরিক নির্বাচনে সতর্কতা জরুরি
সব অংশীদারের নিয়ত কোরবানির জন্য হতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না; কিন্তু পৌঁছায় তোমাদের অন্তরের তাকওয়া। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭) তাই যদি কেউ আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে নিছক গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে, তা হলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারোরই কোরবানি আদায় হবে না। সুতরাং খুব সতর্কতার সঙ্গে শরিক নির্বাচন করা চাই। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৮)

একা কোরবানির নিয়তে পশু কিনে পরে শরিক করার বিধান
যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে ক্রয় করে আর সে ধনী হয়, তা হলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ। তবে এতে কাউকে শরিক না করে তার একা কোরবানি করাই উত্তম। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরিব হয়, যার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তা হলে যেহেতু কোরবানির নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ নয়। যদি শরিক করে, তা হলে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি। আর কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিতে হবে। (ফতোয়ায়ে কাজিখান, ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২১০)

জবাইয়ের আগে শরিকের মৃত্যু হলে করণীয়
জবাইয়ের আগে কোনো শরিকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করার অনুমতি দেয়, তা হলে তা জায়েজ হবে। নইলে ওই শরিকের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তার স্থলে অন্যকে শরিক করা যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার, ৬/৩২৬)

কোরবানির পশুতে আকিকা ও হজের নিয়ত
কোরবানির পশুতেই আকিকা ও হজের কোরবানির নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। এমন পশু হারাম এলাকায় জবাই করতে হবে। অন্যথায় হজের কোরবানি আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৯)

শেয়ার করুন:-
শেয়ার