গত মে মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৫০৮টি। এতে ৫১০ জন নিহত ও ৯২১ জন আহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এই মাসে রেলপথে ৩৭টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৫টি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং ৫২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৫০টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত এবং ৯৩২ জন আহত হয়েছে।
বুধবার (১২ জুন) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মে মাসে ১৭৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৫ জন নিহত ও ১৯০ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ও আহতের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত ও ২১০ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩১ জন চালক, ৭৬ জন পথচারী, ১২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪ জন শিক্ষার্থী, ১৯ জন শিক্ষক, ৮১ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ২ জন সাংবাদিক, ৩ জন প্রকোশলী, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ৬ জন পুলিশ সদস্য, সেনা বাহিনী ২ , র্যাব ১ জন, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন প্রকোশলী, ১০৪ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৬৮ জন পথচারী, ৫৭ জন নারী, ৪৩ জন শিশু, ৪১ জন শিক্ষার্থী, ২৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন শিক্ষক ও ৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৫৭ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ বাস, ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫০ দশমিক ৭৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বিবিধ কারনে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৫৯ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৪২ দশমিক ১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক৭৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
এভাবে দেশের সড়কে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা এবং সক্ষমতা ঘাটতি পূরণ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, সংশিষ্ট সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে গণপরিবহনে নগদ অর্থের লেনদেন বন্ধ করা গেলে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরতে বাধ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সিসি ক্যামরা পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা গেলে পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে, দুর্ঘটনা কমে আসবে।