কলেজে ভর্তিতে নতুন নির্দেশনা দিল শিক্ষা বোর্ড

চলছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়া। তবে অনেক শিক্ষার্থীই নানা সমস্যায় পড়ছেন আবেদন করতে গিয়ে। তবে এরইমধ্যে আবেদন বাতিল করা ও ইমপ্রুভমেন্ট দেয়া শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদনের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে এ নির্দেশনা।

শনিবার (০৮ জুন) কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ও ইমপ্রুভমেন্ট দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন বাতিল করতে চাওয়া শিক্ষর্থীদের জন্য নতুন নির্দেশনা আছে, যেসব শিক্ষার্থী আবেদন বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন বাতিলের সাথে, সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট পেমেন্টও বাতিল হয়ে যাবে। নতুন করে আবেদন করার পর পুনরায় আবেদন ফি প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ‘আবেদন বাতিল’ কিংবা ‘মোবাইল নম্বর পরিবর্তন’ করা প্রয়োজন, তারা অনলাইনে এ ফর্মটি ব্যবহার করুন। এ ফরম ব্যবহার করে কিভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে, তার ভিডিও টিউটোরিয়াল এখানে পাওয়া যাবে। আবেদন করার পরে এ লিঙ্কে স্ট্যাটাস দেখতে পারেন। সংশ্লিষ্ট নোটিশটি বোর্ড বিজ্ঞপ্তি মেনুতে দেখুন।

এছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থী ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের কোন ফলাফল স্মার্ট ভর্তির সিস্টেমে ব্যবহার করা হবে, সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীর পছন্দ বিবেচিত হবে বলে বোর্ড থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এ ফর্মের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের কথা আজকের (৮ জুন) মধ্যে জানাতে পারবেন। এ সময়সীমার মধ্যে পছন্দের কোন তথ্য না পাওয়া গেলে, শিক্ষার্থীর সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফল স্মার্ট ভর্তির সিস্টেমে ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য আগামী ১১ জুন পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। ৫ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৩টি আবেদন পড়েছে। ইএসভিজি চয়েস দাখিল হয়েছে ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০। পেমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫১ জন আবেদনকারীর।

অনলাইনে আবেদন-
শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলতি বছর অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদনের কার্যক্রম চলবে। অনলাইন ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ম্যানুয়ালি ভর্তির আবেদন নেয়া হবে না। ১৫০ টাকা আবেদন ফি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দক্রম দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, এগুলোর মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে ভর্তির অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

মেধা কোটা কত?

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট শূন্য আসনের ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব শূন্য আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ আগের মতোই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অবশিষ্ট ২ শতাংশের ১ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ১ শতাংশ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে। আগের মতো এবারও এসব আসনে শিক্ষার্থী না থাকলে তা মেধা কোটায় বিবেচিত হবে। কোটার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে মেধার ভিত্তিতে তালিকা করা হবে।

ভর্তির যোগ্যতা ও গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে-

পূর্ববর্তী তিন বছরে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নীতিমালার অন্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণসহ অন্যান্য বছরের শিক্ষার্থীরাও ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে। বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড তার সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

বিজ্ঞান গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের যেকোনোটি; মানবিক গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের যেকোনোটি এবং ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক গ্রুপের যেকোনোটিতে আবেদন করতে পারবেন।

আর যেকোনো গ্রুপ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ইসলামি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সংগীত গ্রুপের যেকোনোটি; মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান গ্রুপে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের যেকোনোটি এবং সাধারণ ও মুজাব্বিদ মাহির গ্রুপ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান গ্রুপ ব্যতীত যেকোনোটিতে আবেদন করতে পারবেন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের যেকোনো গ্রুপে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বোর্ড প্রতিবছর নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বরাবর ভর্তির আবেদন, ফলাফল প্রকাশ, ভর্তি ও ক্লাস শুরু সংক্রান্ত শিডিউলের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণপূর্বক অনুমোদন গ্রহণ করবে এবং তা প্রতিবছর বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করবে।

কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন-

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত কোনো ছাত্রছাত্রীর ছাড়পত্র ইস্যু করা যাবে না। কিংবা বোর্ডের পূর্বানুমতি ব্যতীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত ছাড়পত্রের বরাতে ভর্তি করা যাবে না। ছাড়পত্রের (টিসি) মাধ্যমে ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রী ভর্তির ১৫ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে জমা দিতে হবে।

ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ৮৫০০ টাকা-

এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সর্বোচ্চ ফি ৮ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো এ হারে ভর্তি ফি নিতে পারবে। আর ঢাকা মেট্রোপলিটনের বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো একাদশে ভর্তিতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৫০০ টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে।

ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে। জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো তিন হাজার টাকা ও ইংরেজি ভার্সনের নন-এমপিও কলেজগুলো চার হাজার টাকা ফি নিতে পারবে। আর উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সন নন-এমপিও কলেজ ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন নন-এমপিও কলেজ ৩ হাজার টাকা ফি নিতে পারবে।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটনের এমপিওভুক্ত কলেজগুলো বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তির ফি নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার বাংলা ভার্সনের এমপিওভুক্ত কলেজগুলো ও ইংরেজি ভার্সনের এমপিওভুক্ত সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা ভর্তি ফি নিতে পারবে। জেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনের এমপিওভুক্ত কলেজ ও ইংরেজি ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ দুই হাজার টাকা ফি নিতে পারবে। আর উপজেলা পর্যায়ের বাংলা ভার্সনে এমপিওভুক্ত কলেজ ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সন এমপিওভুক্ত কলেজ ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি নিতে পারবে।

ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই-

একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে আগামী ৩০ জুলাই।
ঢাকার নটর ডেম কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে কোনো বাছাই পরীক্ষা হয় না। এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবেন, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।

একাদশে ভর্তির নীতিমালাটি দেখুন এ লিংকে

শেয়ার করুন:-
শেয়ার