ক্যাটাগরি: জাতীয়

ভূমি সেবাকে জনবান্ধব করার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব: ভূমিমন্ত্রী

ভূমি সেবাকে সহজলভ্য ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। আগামী ৮-১৪ জুন সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী ‘ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪’ উদযাপিত হবে বলে জানান তিনি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট ভূমিসেবা, স্মার্ট নাগরিক’।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভূমিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

এ সময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪’ চলাকালীন সেবাগ্রহীতাদের গুরুত্বপূর্ণ যেসব সুবিধা প্রদান করা হবে তার মধ্যে রয়েছে, ই-নামজারির আবেদন করার বিষয়ে অবহিতকরণ ও সহযোগিতা প্রদান, নিষ্পত্তিকৃত এলএ কেইসের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান, অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ, অনলাইনে আবেদনকৃত মৌজাম্যাপ ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ, মাঠপর্যায়ে চলমান জরিপ কার্যক্রম বিষয়ে গণশুনানি, আপত্তি/আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ ও রেকর্ড হস্তান্তরসহ জনগণকে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান ইত্যাদি।

ভূমিমন্ত্রী জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসে সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথ স্থাপন করা হবে এবং সেখানে একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। এবার প্রথমবারের মতো ৮টি বিভাগে বিশেষভাবে প্রস্তুত ৮টি গাড়ি ভ্রাম্যমাণ স্মার্ট ভূমি সেবা প্রদান করবে বলে ভূমিমন্ত্রী জানান। এ ছাড়া ভূমিসেবা নিয়ে সহজবোধ্য বই ‘ভূমি আমার ঠিকানা’ বিতরণ করা হবে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ের (এলএসজি) মাধ্যমে ২য় প্রজন্মের মিউটেশন, খতিয়ান ও এলডি ট্যাক্সের আন্তঃসংযোগ স্থাপন, শতভাগ হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন, সম্পূর্ণ ক্যাশলেস ভূমি অফিসসহ সর্বোচ্চ রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ এবং হয়রানিমুক্ত ও নাগরিকবান্ধব প্রত্যাশিত ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ভূমিসেবাকে সহজলভ্য ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভূমিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, উল্লিখিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলে ভূমিসেবা প্রদানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও উজ্জীবিত নাগরিকবান্ধব ভূমি কর্মকর্তা এবং ভূমিসেবা সম্পর্কে অবহিত ও প্রশিক্ষিত নাগরিক পাবে বাংলাদেশ। এতে পূর্ণ হবে স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্য।

এর আগে বক্তব্যের শুরুতে মন্ত্রী বলেন, দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনার নিজনিজ বিভাগে আজ (৬ জুন) অথবা আগামীকাল (৭ জুন) প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করবেন। এতে স্মার্ট ভূমিসেবা, নাগরিকদের প্রাপ্তি, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং নিজ বিভাগের আওতাভুক্ত জেলায় বিশেষ কর্মসূচির ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনাররা বিস্তারিত জানাবেন। সপ্তাহব্যাপী সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হবে।

মন্ত্রী জানান, ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভূমি বিষয়ক কুইজ ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। অন্যদিকে, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অনলাইনে সেবা ড্যাশবোর্ড যেমন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তেমনি মাঠ পর্যায়ে ভূমি অফিসে আকস্মিক পরিদর্শন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত সাপেক্ষে নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং হবে।

ভূমি সচিব বলেন, ভূমিসেবা গ্রহীতাদের সুবিধার্থে ঢাকায় ভূমি ভবনে নাগরিকসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে নাগরিকগণ সকল ধরনের ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারছেন। সচিব আরও জানান, সারা দেশে এজেন্ট তথা ল্যান্ড সার্ভিস ফ্যাসিলিটেটর নিয়োগের মাধ্যমে একই ধরনের সেবা দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনের পর ভূমি ভবনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সেমিনার হলে ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্পের জাতীয় পর্যায়ের সেমিনার’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।

এ সময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্পের টিম লিডার মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত, প্রকল্প পরিচালক মো. কফিল উদ্দিনসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরামর্শকগণ এবং ভূমি জোনিংবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

কৃষিজমি সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সেমিনারে বক্তারা মতামত ব্যক্ত করেন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার