ক্যাটাগরি: ব্যাংকসারাদেশ

ব্যাংক থেকে সোনা গায়েব, ‘অভিযোগ মিথ্যা’ দাবি ম্যানেজারের

ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী ও তাঁর কন্যা নাসিয়া মারজুকা যৌথ নামের একটি লকার থেকে গ্রাহকের ১৪৯ ভরি সোনা গায়েবের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকের অভিযোগ- ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছেন এসব সোনা। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি- গ্রাহকের অভিযোগ মিথ্যা। ব্যাংকের লকার থেকে সোনা চুরির কোনো সুযোগ নেই। তবুও গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ইন্স্যুরেন্স পাবেন গ্রাহক।

রবিবার (২ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শাখাটির ম্যানেজার শফিকুল মওলা।

তিনি বলেন, আমাদের এক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন- গত ২৯ মে তিনি তার লকার চেক করতে গিয়ে দেখেন, তিনি যে মালামাল রেখেছেন তা ঠিকমত পাননি। পরবর্তীতে তিনি লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং মর্মে আমাদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এরপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে বলেছি এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি কি রেখেছেন তিনি জানেন। আমাদের মনে হচ্ছে তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। এছাড়া অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তিনি জানেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল মওলা বলেন, আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ হিসেবে নিয়েছি এটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধুমাত্র ডিক্লারেশন নেই যে— দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই কি পণ্য এবং কি পরিমাণ রাখা হয়েছে। ঐ গ্রাহক সবশেষ গত ৮ এপ্রিল লকারটি যাচাই করেছেন।

ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। যেন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। আমাদের মনে হচ্ছে এখানে চুরি কিংবা ডাকাতির কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন আমরা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আসলে কি ঘটেছে।

লকারে কি পরিমাণ মালামাল থাকে, তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জানার সুযোগ আছে কিনা কিংবা মালামাল গায়েব হলে নিয়মানুযায়ী কিভাবে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কি পরিমাণ স্বর্ণ গ্রাহকের লকারে ছিল এটি প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু চুক্তিপত্র অনুযায়ী গ্রাহক ছোট, মাঝারি এবং বড় লকারের ক্ষেত্রে যথাক্রমে এক লক্ষ, দুই লক্ষ বা তিন লক্ষ টাকা কর্পোরেট ইন্স্যুরেন্স পাবেন। যে গ্রাহক স্বর্ণ চুরির অভিযোগ করেছেন তার লকারটি মাঝারি আকার ছিল।

লকারের মালামাল চেক করার পদ্ধতি কি— এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল মওলা বলেন, মূলত আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সমস্ত দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন। সমস্ত চেম্বারের একটা মাস্টার কি থাকে, সেটি হোলে (চাবি প্রবেশের স্থান) দিলেই আমাদের দিক থেকে লকার আনলক হয়। এরপর গ্রাহক তার চাবি দিয়ে লকার খোলেন। আমাদের অফিসারও সেখানে থাকেন না। গ্রাহকের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে তার লকারটি তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে বন্ধ করে বেরিয়ে যান। ওই চাবির কোনো ডুপ্লিকেট নেই। এরপর আমাদের অফিসারকে ইনফর্ম করলে অফিসার গিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করেন।

জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের শাখাটির একটি লকারে ১৪৯ ভরি সোনা রেখেছিলেন নগরের চট্টেশ্বরী সড়কের বেভারলি হিল এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বারী। বুধবার (২৯ মে) লকার ইনচার্জের সঙ্গে লকার রুমে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পান- তার লকারটি খোলা এবং সেখানে ১৪৯ ভরি সোনা নেই। পরে তিনি চকবাজার থানায় জিডি করতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তবে এ ঘটনায় জিডি না নিয়ে ভুক্তভোগীকে মামলা করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। সোমবার (৩ জুন) আদালতে মামলা করার কথা রয়েছে।

রোকেয়া বারীর ছেলে রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক বলেন, ২০০৭ সাল থেকে আমার মা এই শাখায় তার স্বর্ণের গহনা রাখার জন্য লকার ব্যবহার করে আসছেন। গত ২৯ মে দুপুর ১২টার দিকে ব্যাংকে গিয়ে লকার রুমের ইনচার্জকে তার লকার দেখার অনুরোধ করেন। মায়ের কাছে লকারের মূল চাবি আছে এবং আরেকটি ডুপ্লিকেট চাবি ইনচার্জের কাছে থাকে। লকার রুমে প্রবেশ করলে ইনচার্জ প্রথমে দেখেন যে মায়ের লকারটি খোলা। আমার মা লকারটি পরীক্ষা করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।

রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক বলেন, লকার খোলা থাকায় বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে চকবাজার থানার ওসিকে জানাই। তিনি ব্যাংকে এসে লকার রুম দেখেছিলেন। এরপর আমরা একটি জিডিও করতে চেয়েছি। কিন্তু ওসি আমাদের আদালতে মামলা করতে বলেছেন। আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল আদালতে মামলা করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে সাতদিনের সময় চেয়েছিল। আমরা তাদের আজ (রবিবার) পর্যন্ত সময় দিয়েছি। ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে আজ এ বিষয়ে তদন্ত করার কথা। যাহোক, আমরা আগামীকাল মামলা করবো।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লকার রুমে কোনো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নেই। ঘটনাটির গুরুত্বের কারণে ভুক্তভোগীকে ফৌজদারি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।

সম্প্রতি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা থেকে গ্রাহকের এক কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হন ক্যাশিয়ার সুজন রহমান ও তার পরিবার। ঘটনাটির রেশ না কাটতেই চট্টগ্রামে একই ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে সোনা গায়েবের অভিযোগ উঠেছে।

বগুড়ার ঐ ঘটনায় বুধবার (২৮ মে) মামলা করেছেন চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- ব্যাংকের ক্যাশিয়ার গোবিন্দপুর গ্রামের সুজন রহমান, তার বাবা এনামুল হক ও মা রুবিয়া খাতুন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার