করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে শীর্ষ অর্থনীতিগুলো মূল্যস্ফীতি ও সুদহারের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথতা নানান ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। জাপান ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশও মন্দার কবলে পড়েছে। সেই সময় জিডিপি পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেল ভারত। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) দেয়া তথ্য অনুসারে, মার্চে শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। খবর দ্য হিন্দু ও মিন্ট।
এনএসওর তথ্যানুযায়ী, মার্চে শেষ হওয়া ভারতের চতুর্থ প্রান্তিকে অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির ৭ শতাংশ সম্প্রসারণ ঘটে।
অবশ্য সর্বশেষ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চেয়ে চতুর্থ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ কমেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের দুই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ২ ও ৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রবৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিকে ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের আকারের দিকে নিয়ে গেছে, যা পরবর্তী কয়েক বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার লক্ষ্য অর্জনের মঞ্চ প্রস্তুত করছে।
সরকারের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থিরমূল্যে জিডিপির প্রাক্কলন ছিল ১৭৩ দশমিক ৮২ লাখ কোটি রুপি। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) সংশোধিত প্রাক্কলন ছিল ১৬০ দশমিক ৭১ লাখ কোটি রুপি। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৭ শতাংশের বিপরীতে ২০২৩-২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি সমন্বয় না করলে চলতি মূল্যে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জিডিপি ২৯৫ দশমিক ৩৬ লাখ কোটি রুপি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২৬৯ দশমিক ৫০ লাখ কোটি রুপি। এ হিসাবে মূল্যস্ফীতির সমন্বয় বাদ দিলে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এর আগে এনএসও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৭ শতাংশ সংশোধিত প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছিল। এছাড়া চতুর্থ প্রান্তিকে ৫ দশমিক ৯ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত মন্থর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
এদিকে মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিকে এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের প্রবৃদ্ধির চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছে। তবে এটি বার্ষিক ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
আগামী ৪ জুন ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে। এর মাত্র দুদিন আগে দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতির এ বার্ষিক ডাটা প্রকাশ হলো। জিডিপি প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স বার্তায় লেখেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ডাটা অর্থনীতির শক্তিশালী গতিকে দেখায়, যা আরো গতিশীল হতে প্রস্তুত। বার্ষিক ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বলে দিচ্ছে যে ভারত দ্রুততম হতে চলেছে। যেমন আমি বলেছি, ভারত বিশ্বে ক্রমবর্ধমান শীর্ষ অর্থনীতি। এজন্য দেশের পরিশ্রমী মানুষদের ধন্যবাদ জানাই। এটি আগামী দিনের অর্থনীতির জন্য একটি ট্রেলার মাত্র।’
জিডিপির এ হার বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ উল্লেখ করে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘অর্থনীতির সূচকগুলো বলছে, বিশ্ববাজারের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতি স্থিতিস্থাপক ও প্রাণবান ভূমিকা পালন করছে।’
তিনি আরো জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন খাত উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ খাতে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ সম্প্রসারণ ঘটেছে।
এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খনিজ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে উৎপাদন খাত ২ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। তবে খনিজ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের শুরুর দিকের কিছু প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান দিয়েছে ভারত সরকার। তথ্য অনুসারে, প্রাকৃতিক গ্যাস, পরিশোধনাগার পণ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ আটটি মূল অবকাঠামো খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত এপ্রিলে এসব খাতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সর্বশেষ মাস মার্চে এ আট খাতে উৎপাদন বেড়েছিল ৬ শতাংশ।
এদিকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) বার্ষিক প্রতিবেদনে দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল শীর্ষ অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃত ভারত, বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আগামী বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ভারত।