ক্যাটাগরি: সারাদেশ

ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এরইমধ্যে জরুরি বৈঠক করেছে।

অন্যদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেটের বিভিন্ন এলাকার পর্যটনস্পট বন্ধ ঘোণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্থানীয়দের সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি গতকাল থেকেই ছিল বিপৎসীমার ওপরে। বুধবার রাতে ভারতের মেঘালয় থেকে আরও ঢল নামতে শুরু করেছে।

বুধবার রাতে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪-৫টি স্থানে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তাছাড়াও অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে। ওই উপজেলার সুরমা নদীর বেড়িবাঁধগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় ডাইক ভেঙে পানি ঢুকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তাছাড়া অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের টিম কাজ করছে। কিন্তু প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙা ডাইক মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করলেও সুরমায় এখন পর্যন্ত কোথাও ভাঙনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে।

প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানিবন্দি হয়েছেন অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ।

বন্যায় গোয়াইনঘাটে ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৫০টির বেশি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কসহ এই চার উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। এতে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সড়কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে ও কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়াও সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিগোয়াইন নদী ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতরাতে সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একইসময়ে জৈন্তাপুরের লালাখালে রেকর্ড হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টিপাত ও ভারতের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলেই সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, উপজেলার উঁচু এলাকা ছাড়া সব প্লাবিত, কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির চালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। রাতে প্রবল স্রোতে উদ্ধার অভিযান ভালোভাবে পরিচালনা করা না গেলেও ভোর ৪টা থেকে পুরোদমে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দ্বি হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক মানুষ পার্শ্ববর্তী উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় উপজেলার সকল পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এরইমধ্যে বৈঠক করেছে। দ্রুত উদ্ধার অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীও এরইমধ্যে রেকি করে গেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধারাভিযান ও ত্রাণ বিতরণে যোগ দেবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার