হজ ও ওমরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ইবাদত। হজ সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর জীবনে একবার ফরজ। ফরজ হজের বাইরে একজন মুসলমান যতবার ইচ্ছা হজ করতে পারেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লহা তায়ালা বলেছেন,
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين
মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত : ৯৭)
হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন,
হে লোকসকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। তখন হজরত আকরাহ ইবনে হাবেস রা. দাঁড়িয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হজ কি আমাদের ওপর প্রত্যেক বছরই ফরজ? নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি আমি হ্যাঁ বলে দিতাম তাহলে তা প্রত্যেক বছরই তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যেত। কিন্তু তা সাধ্যতীত হওয়ায় তোমরা তাতে আমল করতে না। সুতরাং তোমাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তার ওপর একবার হজ ফরজ, বাকি নফল। (আবু দাউদ: ১৭২১)
হজের ইবাদতগুলো জিলহজ মাসের দ্বিতীয় দশকে মোট পাঁচ দিন (৮-১২ জিলহজ) পালন করা হয়।
অপরদিকে ওমরা একটি সুন্নত আমল। হজের পাঁচদিন ছাড়া বছরের যেকোনো সময় ওমরা পালন করা যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হজ ও ওমরা পালনের কথা বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে,
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ
আর হজ ও ওমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ কর। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
نَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاکِرٌ عَلِیۡمٌ
‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম, তাই যারা হজ করবে বা ওমরা করবে; তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সাঈ) করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৮)
হজ-ওমরার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরা একটার পর অপরটা করো। কেননা, হজ ও ওমরা দারিদ্র্য বিমোচন ও গুনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
অপর এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, এক ওমরা থেকে পরবর্তী ওমরা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ। (বুখারি, হাদিস : ১৬৮৩, মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)।
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮১১)
আতা ইবনে ইয়াসার রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ করে, হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৮৮১৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৫৮)
(দীর্ঘ এক হাদিসে) আমর ইবনুল আস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ) পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২১; সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ২৫১৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৭৭৭)