আন্তর্জাতিক বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদহার বাড়তি রাখতে পারে।
এমন প্রত্যাশায় বৈশ্বিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের (এপিআই) পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও পেট্রলের মজুদ বেড়েছে। মজুদ বেড়ে যাওয়ায় এসব জ্বালানি পণ্যের দাম কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১ শতাংশেরও বেশি কমেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ৩ সেন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ব্যরেলপ্রতি কেনাবেচা হয়েছে ৮১ ডলার ৮৫ সেন্টে। অন্যদিকে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ২৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। ব্যারেলপ্রতি কেনাবেচা হয়েছে ৭৭ ডলার ৪১ সেন্টে।
এ বিষয়ে অয়েল ব্রোকার কোম্পানি পিভিএমের কর্মকর্তা তামাস ভার্গ বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ এখনো সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটি বাড়তিই থাকতে পারে, এমন প্রত্যাশায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে।
মঙ্গলবার ফেড নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, সুদহার কমানোর আগে মূল্যস্ফীতি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করা উচিত।
আর্থিক পরিষেবা সংস্থা এএনজি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (এফওএমসি) ফেডের চলতি বছর সম্ভাব্য সুদহার কমানোর সময় প্রথম প্রান্তিকের মূল্যস্ফীতি মূল্যায়ন করবে।
এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন কমছে। গত বছরও এ পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির গতি ছিল অনেক ধীর। চলতি বছর এ গতি আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ফিরে যেতে পারে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী-পূর্ব ধারায়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এমনটা জানিয়েছে। চাহিদা কমে গেলে বৈশ্বিক বাজারে এ পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যাবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী দেশ চীন। এ দেশেও আগামী বছরগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে আসবে বলে আগেই জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্র মালিকানাধীন জ্বালানি তেল ও গ্যাস করপোরেশন সিএনপিসি। বিশ্বের শীর্ষ ব্যবহারকারী হওয়ায় চীনের চাহিদা কমার বিষয়টি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারকে নিম্নমুখী চাপের মুখে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের গবেষণা ইউনিটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোয় গাড়ি শিল্পে পেট্রল-ডিজেলচালিত গাড়ির বাজার অনেকটাই দখলে নেবে বিদ্যুচ্চালিত বাহন। ফলে এ খাতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা ব্যাপক মাত্রায় কমতে পারে। পাশাপাশি পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলের বদলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বৃদ্ধিও চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।