রাত পোহালেই সারাদেশে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে ১৫৬ উপজেলার ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
১৫৬ উপজেলার মধ্যে ২৪ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে এবং বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন কারণে ৫টি উপজেলায় ভোট স্থগিত করা হয়।
সোমবার (২০ মে) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক (বৈধ এবং সঠিকতা যাচাইকরণ) মুহা. সরওয়ার হোসেনের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ২৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে হবে। ২৪টি উপজেলার ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম নির্বাচন ভবনের ‘ইভিএম কন্ট্রোল রুম’ থেকে পরিচালনা করা হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ইভিএমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, মোবাইল কারিগরি টিম এবং ভোটগ্রহণকারী কারিগরি টিমের সঙ্গে ‘ইভিএম কন্ট্রোল রুম’ থেকে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করা হবে। সেজন্য আইডিইএ প্রকল্প (পর্যায়-২), নিকস থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ২৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী, প্রচার শেষ করতে হয় ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে। একই সময় থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সেই অনুযায়ী, রোববার (১৯ মে) উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে।
নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে। কিছু কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানো হচ্ছে। ভোট উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, তারা কেন্দ্রীয়ভাবে এ ভোট মনিটর করবে। কোনও ধরনের অনিয়ম হলেই তাৎক্ষণিকভাবে তারা ব্যবস্থা নেবে।
ইসি গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় শেষে চূড়ান্ত হয় এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫২৮ জন। গত ১ মে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ভোটের মাঠের নিরাপত্তায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৭ সদস্যকে মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ১৩ হাজার ১৬টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোট ১৩ জন বা ততোধিক আনসার ও ভিডিপি সদস্য রোববার থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার ও দুজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডারের নেতৃত্বে ছয়জন পুরুষ এবং চারজন নারী আনসার-ভিডিপি সদস্য রয়েছেন।
যেসব কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ছয়টির বেশি সেসব বুথের প্রতিটিতে অতিরিক্ত আরও একজন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনজন অস্ত্রসহ এবং বাকিরা অস্ত্রবিহীন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫২৭ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৭৯ প্লাটুন (২৩৭০ জন) আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালনের জন্য স্ট্রাইকিং/স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল টিমে/স্ট্রাইকিং ফোর্সে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ন্যূনতম সেকশন (প্রতি সেকশন ১০ জন করে) ফরমেশনে দায়িত্বপালন করবেন।
এ ছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম বা স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন প্রায় ১০৫ প্লাটুন (৩২৪০ জন) সশস্ত্র আনসার ভিডিপি সদস্য। মোতায়েন করা সদস্যদের দায়িত্বপালন তদারকির জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আরও ২২৯০ জন সদস্য মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সবাই ১৯ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত মোট পাঁচ দিনের জন্য মোতায়েন থাকবেন।
কাফি