ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আহ্বান ডিএসই চেয়ারম্যানের

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল ইস্যুতে স্বচ্ছতার অভাবে পুঁজিবাজার অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা আপনাদের আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও আর্থিক প্রতিবেদন সঠিকভাবে তৈরি ও প্রকাশের জন্য বিভিন্ন আইন-কানুন তৈরি করেছে। কিন্তু বিধিবিধান সম্পর্কে অধ্যয়ন না করার কারণে আর্থিক প্রতিবেদনে বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে না। কোম্পানির সচিব এবং সিএফওদের উচিত বিধি-বিধানগুলো সঠিকভাবে পড়া এবং সেগুলো যথাযথ পালন করা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছয়টি সেক্টরের মোট ৪৮টি কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবদের অংশগ্রহণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে “ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এবং ডিসক্লোজারস: রেগুলেটরি রিকুয়ারমেন্টস” শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ডিএসইর পরিচালক মো. আফজাল হোসেন; সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিএসইসির প্রধান হিসাবরক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক কামরুল আনাম খান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি সুপরিকল্পিত কাঠামো তৈরি করতে চাই। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ বা পদে পদে বাধাগ্রস্থ করার জন্য কাঠামো তৈরি করতে চাই না। তারা যাতে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুন্দরভাবে টিকে থাকতে পারে, তার জন্য কাজ করতে চাই। এর আগের অনুষ্ঠানে ৪২টি কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আজকে ৪৮টি কোম্পানির প্রতিনিধিকে নিয়ে করা এই অনুষ্ঠানে গিয়ে মনে হয়েছে যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থায়, বিভিন্ন সেল্ফ রেগুলেটর সংস্থা এবং যারা বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে আছেন তাদের মধ্যে একটি সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তারা একে পরিপূরক, সম্পূরক বা সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করতে পারছি না।

তিনি বলেন, কমিশন অনেক সময় মনে করে- প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় না বা অডিটরগণ যে রিপোর্ট তৈরি করেন, তাতে অনেক কিছু গোপন থাকে। এখানে যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদেরকে তিন মাসে, ছয় মাস এবং বছরে রিপোর্ট দিতে হয়। এতে করে আপনার যারা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে তাদের প্রতি আপনারা বাস্তব তথ্য তুলে ধরেন। তাই এই ক্ষেত্রে অবশ্যই কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কিভাবে বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারেই আমরা কাজ করছি।

আব্দুল হালিম বলেন, অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে যে রকম অবদান রাখে আমরাও চাই আমাদের পুঁজিবাজার সেরকম অবদান রাখুক। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা দেখি জিডিপিতে অবদান থাকলেও সেই ধরনের পর্যায়ে নেই। এদিকে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের যে ব্যবধান রয়েছে শুধু সেটা নয়, আরো যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসইর পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এর প্রয়োজন হয়। সকলের স্বার্থেই ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং সঠিকভাবে হওয়া প্রয়োজন। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং সময়মতো ও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। এটির উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করেন। তাই সকলের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার কোন বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট এবং ডিসক্লোজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মালিক, বিনিয়োগকারী এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য। কারণ এটার সাথে বড় একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট হচ্ছে- মূলত চার্টার্ড একাউন্টদের যেটা নিরীক্ষক প্রতিবেদন থাকে এবং সেটার সঙ্গে কিছু সংযুক্ত তথ্য থাকে। এটার সঙ্গে বিস্তারিত তথ্যসহ একটি ফুল ডিসক্লোজ থাকবে। যেটার মাধ্যমে একেবারে সাধারণ যে মানুষও আর্থিক প্রতিবেদনটা বুঝতে পারবে, সেভাবে প্রকাশ করতে হবে। এটা হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এর মূল কথা। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা আরো বিস্তারিত প্রকাশ করতে হয়।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়। একটি সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানির অবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে। কারণ আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স, গভর্নেন্স, আর্থিক অবস্থার সঠিকতাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই থাকে। একটি দক্ষ পুঁজিবাজারের অন্যতম শর্ত হলো তথ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে সময়মত প্রকাশ করা। দক্ষ পুঁজিবাজার করতে হলে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। যা শেয়ারের মূল্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরী। এজন্য ডিএসই ধাপে ধাপে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এ ধরণের প্রোগ্রামের আয়োজন করবে।

বিএসইসির প্রধান হিসাবরক্ষক এবং নির্বাহী পরিচালক কামরুল আনাম খান বলেন, সময়মতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে শুধু জরিমানাই হয় না, একইসাথে বিনিয়োগকারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও পুঁজিবাজারে কোম্পানিটি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হয়। তাই কোম্পানির সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য সকল আইনকানুন সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরী কর্মকর্তা খাইরুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, ডিএসইর রেগুলেটরী অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে। আমরা আজকে ৬টি সেক্টরের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করেছি। আজকে সেমিনারে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবগণ উপস্থিত রয়েছেন। আপনাদের কাছে আমি যে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই তা হলো আপনারা সময়মতো এবং স্বচ্ছতার সাথে আপনাদের আর্থিক প্রতিবেদনগুলো তৈরি করবেন। আপনাদের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান মোঃ মাসুদ খান৷ মূল প্রবন্ধে তিনি আর্থিক প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, আর্থিক বিবরণী জমা দেওয়ার নিয়ম, প্রবিধান, বিজ্ঞপ্তি, সময়সীমা, আর্থিক বিবৃতিগুলির প্রধান অসঙ্গতি ও নন কমপ্লায়েন্স এবং প্রশমনের উপায় নিয়ে আলোকপাত করেন।

এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার