চলতি সপ্তাহে এশিয়ার স্পট মার্কেটে দাম বেড়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি)। এশিয়ার বাজারে জ্বালানিটির দাম বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মূলত জ্বালানিটির বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জুনের সরবরাহের জন্য প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় দাম চলতি সপ্তাহে ১০ ডলার ৫০ সেন্টে উঠেছে, এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ১০ ডলার ৪০ সেন্ট।
বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপলারের এলএনজি বাজারবিষয়ক বিশ্লেষক রিহানা রাশদি জানান, এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে এলএনজির দাম বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার জার্গন এলএনজি প্রকল্পে সংকট দেখা দেয়ায় মূলত জ্বালানিটির বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব পড়েছে। জার্গন প্রকল্পটি বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি প্রকল্প। এমন একটি প্রকল্পে সংকট দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ সংকোচনের মুখে পড়ে।
তবে এ সংকট বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় শিগগিরই চাহিদা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এসব অঞ্চলে গ্যাস ও এলএনজির মজুদও পর্যাপ্ত।’
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জার্গন গ্যাস ফ্যাসিলিটির একটি উৎপাদন ট্রেইন (এলনজি খাতে গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ, পরিশোধন ও তরলীকরণের সার্বিক কার্যক্রমকে ট্রেইন বলা হয় ) বন্ধ হয়ে পড়েছিল। বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন, এটি অন্তত পাঁচ সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। তবে শেভরন অস্ট্রেলিয়া গত সপ্তাহে জানায়, সেখানে পুরোদমে ফের উৎপাদন শুরু করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কমোডিটি প্রাইসিং এজেন্সি আর্গাসের এলএনজি প্রাইসিং বিভাগের প্রধান স্যামুয়েল গুড বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের ক্রেতারা দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার পরিমাণ সীমিত করেছে। বর্তমানে তারা বাড়তি চাহিদা মেটাতে টার্মিনালগুলোয় থাকা মজুদের ওপরই নির্ভর করছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিপোর্ট এলএনজির রফতানি টার্মিনালে এলএনজি উৎপাদন বেড়েছে। তিন ট্রেইন ফ্যাসিলিটির দুটিতেই ফিডগ্যাসের সরবরাহ পূর্ণ সক্ষমতা কাছাকাছি পর্যায়ে অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে কাতার থেকেও এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কাতার এলএনজি রফতানিতে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ। সরবরাহ কমে যাওয়ার এ আশঙ্কাও মুল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
এদিকে এলএনজির পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। কারণ ইউরোপমুখী জাহাজগুলো লোহিত সাগর এড়িয়ে চলছে। ফলে বিকল্প পথে এলএনজির পরিবহনে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ১০ ডলারের ওপরে উঠে যাওয়ায় ভারত ও চীনসহ এশিয়ার ক্রেতা দেশগুলো ফের আমদানির পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে।
কাফি