ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী মেস কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কয়েকজন যুবকের কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি ও বিবাদে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির দুইজন পুলিশ এসে মেসের কর্তৃপক্ষ, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
সোমবার (১৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পকেট গেইট সংলগ্ন শেখপাড়া এলাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির দুজন পুলিশ এসে মেসের কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এতে ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আহতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের আবু হানিফ পিয়াস, সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাকিব আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির এবং আইসিটি বিভাগের নাঈম রেজা। এছাড়াও মো. আশিক খান নামে স্থানীয় একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী নূর জাহান ছাত্রীনিবাসের এক শিক্ষার্থীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। পরে বিদ্যুৎ বিল নিতে ম্যানেজার ছাত্রীর অনুমতি না নিয়েই তার কক্ষে প্রবেশ করে। এতে ওই মেয়ে রাগান্বিত হয়ে ম্যানেজারকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। পরে মেসের ম্যানেজারকে বিল দিতে গেলে বিলের পরিমাণ নিয়ে ঝামেলা হলে সে তার বন্ধুদের জানায়। তার বন্ধুরা মেসে যেয়ে অনুমতি না নিয়ে রুমে প্রবেশ করে, বিভিন্ন সময় বাজে ইঙ্গিত দেওয়া, হাত ধরার চেষ্টা করার ব্যাপারে ম্যানেজারকে জেরা করে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুদের উপরে চড়াও হয়। মারামারির একপর্যায়ে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকসহ কয়েক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুই যুবক আহত হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ফারিয়া খাতুন বলেন, মেস ম্যানেজার (বিবেক বিশ্বাস) বিদ্যুৎ বিলের নাম করে শিউলী খালাকে আমার রুমে পাঠাতো। ম্যানেজারও রুমে মাঝে মধ্যে এসে খোঁজ খবর নিতো। ম্যানেজার আমার সাথে কেমন টাইপ কথা বলার চেষ্টা করতেন। বিদ্যুৎ বিল নিতে সে মেয়েদের হাত স্পর্শ করার চেষ্টা করত। বিদ্যুৎ বিল হয়েছিল ৪১৫ টাকা। আমি বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে টাকা টেবিলে রাখি। এতে ম্যানেজার ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া থাপ্পড় দিয়ে মেস থেকে বের করে দেয়ার হুমকি প্রদান করে। ম্যানেজার আমাকে হুমকি দেয়ায় ভীত হয়ে বন্ধুদের ডেকেছি। প্রথমে তারা ম্যানেজারের সাথে ভাল ভাবেই কথা বলে। আমার বন্ধুদের সামনেও ম্যানেজার আমাকে থাপ্পড় মারার কথা বলে। এতে বন্ধুদের সাথে ম্যানেজারের তর্কাতর্কি হয়। পরে খালু (ইসলাম জোয়াদ্দার) এসে তাদের বের করে দেয়। আমার বন্ধুদের ডাকা ভুল হয়েছে। এজন্য আমি অনুতপ্ত।
নূর জাহান মেসের ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বলেন, আমার ব্যাপারে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি সেই মেয়েকে থাপ্পড় দিবো এমন কিছু বলিনি। আমি বিদ্যুৎ বিল চাইলে সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সে আমাকে বলে এটা আপনার বাপের বিল্ডিং নাকি! এখনই আপনার ১২টা বাজাচ্ছি বলে তার বন্ধুদের ডাকে। তার বন্ধুরা আমার উপর চড়াও হয়। আমাকে বের করে মারধরের হুমকি দেয়।
মেসের কর্মরত শিউলী বলেন, এই মেয়ে দেরী করে রুমে আসে। অনেক সময় রাত ১২ টায় মেসে আসে। সেই মেয়ে আমাদের সাথেও অনেক খারাপ ব্যবহার করে। এছাড়া ইসলাম ভাইরে তার বন্ধুরা মেরেছে।
মেসের কেয়ারটেকার ইসলাম জোয়াদ্দার বলেন, ওই ছেলে আগেও একবার এসে হম্বিতম্বি করে গেছে। আমি তাকে অফিসে বসে ঠান্ডা ভাবে কথা বলতে বললে ওই ছেলে বলে তুমি মুরুব্বী, মুরুব্বীর মতো থাকো নইলে মাইর খাবানে। পরে আমি তাকে জোর করে মেস থেকে বের করে দেই। আছরের নামাজের পরে এই ঘটনা ঘটে, পরে সন্ধ্যার দিকে লোকজন নিয়ে এসে মারামারি করেছে।
ফারিয়ার বন্ধু আবু হানিফ পিয়াশ বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে বেশ কয়েকদিন ধরেই মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিল। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তার রুমে প্রবেশ করার চেষ্টা করে এবং তাকে বাজে ইঙ্গিত প্রদান করে। ফলে এ বিষয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মিটমাট করতে গেলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পারলে তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে। লাঠিসোঁটা দিয়ে আমাদের আঘাত করে। তারপর আমরা আহত অবস্থায় কোনোরকমে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি। এসময় আমি সহ আমার আরো ৩ বন্ধু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকার মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়। সেই মেয়ের সমস্যা হলে মেস মালিককে বিষয়টি জানাতো। কিন্তু সে এটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে এনেছে। শিক্ষার্থীদের কারণে অনেক সময় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তার বন্ধুরা এখানে মাস্তানি দেখাতে এসেছে। ভিডিও ফোটেজ দেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
এসময় রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করেছি। এখানে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো আমরা সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি। যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয় আমি লোকাল থানায় ইনফর্ম করে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে পুলিশ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিষয়টি আপাতত মিটমাট করেছে। তবে এখানে আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা আমি শুনেছি, সার্বিক বিষয়ে আমরা আগামীকাল সকাল ১১ টায় মেস মালিক এবং প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে মিটিং এ বসবো।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম