ব্যাংক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় বিতরণ করা হচ্ছে ঋণ। নামে-বেনামে দেওয়া এই ঋণ মেয়াদ শেষে ব্যাংকেও ফিরছে না। ফলে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। পাশাপাশি তারল্য সংকটে ভুগছে নানান তফসিলি ব্যাংক। ব্যাংক খাতের এমন দুর্দিনে খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা না করার নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মামলার পরিবর্তে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ঋণ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রোববার (১২ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে আদালত রায় বা আদেশ প্রদানের আগে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারি করা নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা। ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিআইএসিসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, অথবা অন্য যেকোনো উপযুক্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নির্বাচন করা।
মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষগণ ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা। মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
এদিকে এডিআররের কার্যক্রম গতিশীল করতে লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায় এডিআর’র মাধ্যমে করতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
এমআই