অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে পুনরায় বিএসইসি চেয়ারম্যান করে প্রজ্ঞাপন জারি

দ্বিতীয় মেয়াদে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে পুনঃনিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের সাবেক ডিন ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। রবিবার (২৮ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ পদে তাঁর পুনঃর্নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়ে একাধারে চার বছর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। এসময় পুঁজিবাজারের ডেফথ বাড়াতে গুণগত পরিবর্তন আনতে তিনি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ এর ধারা ৫ ও ৬ এর বিধানাবলী প্রতিপালন করতে শিবলী রুবাইয়াতকে আগামী চার বছর মেয়াদের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

এর আগে গত ৩১ মার্চ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরো এক মেয়াদে পুনঃর্নিয়োগের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী তাতে ৪ এপ্রিল স্বাক্ষর করেন।

চিঠিতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ এর ধারা ৫ ও ৬ এর বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বয়স পঁয়ষট্টি হলে তিনি চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদে বহাল থাকতে পারবে না। সেই হিসাবে ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথমবার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শিবলী রুবাইয়াত এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ১৬ মে। এসময় তাঁর বয়স হবে ৫৬ বছর ৪ মাস ১৫ দিন। সে অনুযায়ী আরও একটি মেয়াদে চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগের যোগ্য।

২০২০ সালের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ঘুমন্ত পুঁজিবাজারকে জাগিয়ে তুলেন। এসময় পুরো কমিশন পুনর্গঠিত হয়। নতুন কমিশন পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার জন্য বড় বড় কর্মসূচি গ্রহণ করে। চলমান উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন নতুন পদক্ষেন নেয়। তবে এ কাজ করতে নানা ধরণের ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাজ করতে হয় কমিশনকে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে শেয়ারবাজার খোলা রাখার ব্যবস্থা নেয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে সুশাসন ফেরাতে আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দুর্বল ও লোকসানে থাকা কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনতে প্রশাসক বসানো এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া, শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিরো টলারেন্স নীতিতে স্থগিত করা হয় অনেক কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকদের বিও হিসেবে থাকা শেয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে অনেকের ব্যাংক হিসাব। এর বাইরেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন‌্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করে কর সুবিধা বাড়ানো, রাষ্ট্রায়ত্তসহ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তাগিদ বৃদ্ধি করা, ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ সেপ্টেম্বরের আগে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) শক্তিশালী করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করপোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করা, জেড ক্যাটাগরি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, পুঁজিবাজারের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সভা (এজিএম, ইজিএম, পর্ষদ সভা) করার অনুমোদন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া সহজতর করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ও বিদেশে ব্রোকার হাউজের শাখা হিসেবে ‘ডিজিটাল বুথ’ খোলার অনুমোদন, পুঁজিবাজারকে ডিজিটালাইজড করা ইত্যাদি।

২০২১ সালে পুঁজিবাজারের সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন আইনকানুন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর কঠোরতা আরোপ, দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বল কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব জব্দ, ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন, আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক সমবন্টন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একাধিক আইপিও বাতিল করা, ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) বাতিল করে এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালু করা, অল্টারনেটিভ প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ, ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, লভ্যাংশ না দেওয়া ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ, বুকবিল্ডিংয়ের বিডিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্যোগ, বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে-বিদেশে ব্রোকার হাউজের শাখা হিসেবে ডিজিটাল বুথ স্থাপন, পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশে ‘রোড শো’ এর কার্যক্রম শুরু করা, বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ, স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ড-সুকুক-ট্রেজারি বন্ড চালুর উদ্যোগ, ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ট্রেক ইস্যু করা, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ, স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ, মার্কেট মেকারের অনুমোদন, পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ ইত্যাদি।

২০২২ সালে বিএসইসির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগ হলো পুনরায় ফ্লো প্রাইস আরোপ করা। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে ওই বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারের দাম কমানো ঠেকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এ ধরনের পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের পুঁজিবাজারে না থাকলেও আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বহাল রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১৬৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করার সুপারিশ, দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোকে পুনরায় উৎপাদনে ফেরানো, পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে লাপাত্তা হওয়া সেগুলোকে ডি লিস্টিং করিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ কিছু আইন-কানুন, বিধিবিধান সংস্কার, কোম্পানিগুলোকে বোনাস লভ্যাংশের বদলে নগদ লভ্যাংশ দিতে অনুপ্রাণিত করা, পুঁজিবাজারে সরকারি সিকিউরিটিজের (ট্রেজারি বন্ড ও ডিবেঞ্চার) লেনদেন চালু, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে শৃঙ্খলায় ফেরানো, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, ইসলামি গ্রিন সুকুকের লেনদেন চালু, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু, জাপানে ভার্চুয়ালি রোড শো আয়োজন করা, মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার- ২০২২ প্রদান, বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ পুনর্বহাল রাখার সুপারিশ, এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সহজ করা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনে সহায়তা প্রদান, সিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজিকে অনুমোদন প্রদান, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড (ইটিএফ) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) গঠনে আইন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) মাধ্যমে ফেরত প্রদান, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব বা ভীতি ছড়ানো কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ, শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করা ও বোনাস শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন, ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখার কারণে স্তিমিত থাকা নতুন বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আনতে নগদ লভ্যাংশ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিওত) অ্যাকাউন্টে আনার উদ্যোগ, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল মেয়াদে প্রথমবারের মতো বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ ইত্যাদি।

২০২৩ সালে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির (শেয়ার) পাশাপাশি নতুন পণ্যভিত্তিক বৈচিত্র্যময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ পলিসিগত বাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বিশেষ করে ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হওয়ার লক্ষ্যে নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য হিসেবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করা, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালু করা, কমোডিটি ও ডেরিভিটিভস এক্সচেঞ্জ চালু করতে বিধিমালা তৈরি করে গেজেট প্রকাশ, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা ইউরোপের দেশগুলোতে রোড শো আয়োজন করা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তৃতীয় দফায় ফ্লো প্রাইস আরোপ করা, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখার সিদ্ধান্তে সুপারিশে প্রদান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জনে সহায়তার লক্ষ্যে শক্তিশাল বন্ড মার্কেট গঠনে ইউএনডিপি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনসের (আইএফসি) সহায়তার গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণসহ সমঝোতা চুক্তি, নারীদের জন্য ‘অরেঞ্জ বন্ড’ নামক এক বিশেষায়িত বন্ড তৈরির উদ্যোগ, বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ প্রদানের সুবিধা বাড়াতে নীতি সহাতা প্রদান, পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণের জন্য পৃথক ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের পরিবর্তে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ, পুঁজিবাজারে ইসলামিক শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ আনা এবং ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে শরীয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের (এসএসি) অনুমোদন, আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) সভা প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আয়োজন করা, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা স্পষ্টীকরণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে সতর্কতা বাড়ানোর উদ্যোগ, মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি কমাতে পুঁজিবাজারে ‘ফরেক্স’ চালুর উদ্যোগ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে পুনরায় কঠোরতা আরোপ, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ নানা বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নিয়ে বিএসইসি-মালয়েশিয়ান রাবার কাউন্সিলের বৈঠক, আইন-পলিসি নির্ধারণ নিয়ে বিএসইসি ও আইএমএফের বৈঠক, ৪ ব্রোকারেজ হাউজে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান, পুঁজিবাজারে স্বতন্ত্র পরিচালকের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি, বিভিন্ন কোম্পানি একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বেশ কিছু আইন-কানুন, বিধিবিধান সংস্কার, পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে বছরজুড়েই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান; বগুড়া ও সিলেট বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও দক্ষতা বাড়ানো, বছরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে পুঁজিবাজারের সদস্য করা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার পূর্বে উত্তরা ব্যাংকের (তৎকালীন ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশন) ৪০টি শেয়ার তার যোগ্য উত্তরসূরির নিকট হস্তান্তর করা ২০২৩ সালের অন্যতম বড় অর্জন।

২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া বিএসইসি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়া প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সনদ প্রদান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান, বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সফরতর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক, স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকের (বিনিয়োগকারী) মার্জিন ঋণের পোর্টফোলিওতে পুনর্মূল্যায়ন জনিত অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে রক্ষিতব্য প্রভিশন সুবিধার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো, প্রায় ৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের লেনদেন শুরুর সিদ্ধান্ত, অডিটর ও অডিট প্রতিষ্ঠান বিএসইসির তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাদে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের নিয়ে নির্দেশনা জারি; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হওয়া, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা এবং সম্পদের চেয়ে দায় বেশি থাকায় কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা জারি, ২৬টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ধারণ নিশ্চিত করার পুনরায় নির্দেশ ইত্যাদি।

জানা গেছে, শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম কমিশন দায়িত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করে। এতে পুঁজিবাজার উপকৃত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বাত্মক পারস্পরিক সহযোগিতায় সংকটময় পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার গতিশীল রাখার প্রয়াস নেয়। এসময় বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে গেছে। তবে সূচক বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বৈশ্বিক সংকটে দেশের পুঁজিবাজার অনেক ভালো আছে। এ সময়ে কমিশন এসএমই প্ল্যাটফর্ম, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), ট্রেজারি বন্ড, কমোডিটি এক্সচেঞ্জসহ নতুন নতুন প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে সংযুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পেতে শুরু করেছে। এছাড়াও কমিশনের সফলতায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর মাধ্যমে নতুন মাইলফল অর্জন করে পুঁজিবাজার।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য এবং কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন। পাশাপাশি বাণিজ্য অনুষদের ডিন হিসেবে বহুবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ। বর্তমানে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডির সদস্য। এছাড়া সাধারন বিমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবেও তিনি ২ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫-১৯৮৯ সালে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।তাঁর পিতা রফিকুল ইসলাম খান অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাঁর মা হাসিনা মমতাজ (১০ মার্চ ১৯৪৫-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) একজন দেশের প্রখ্যত সংগীতশিল্পী। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ও মানবিক বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক। এই দম্পতীর ২ ছেলে সন্তান রয়েছেন।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার