বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে এ প্রকল্পে, যার পুরোটাই হবে বিদেশি বিনিয়োগে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ১৩৭তম বন্দর দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এ তথ্য জানান। শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প হতে যাচ্ছে বে-টার্মিনাল। বন্দরের মাল্টিপারপাস টার্মিনালে এক বিলিয়ন ডলার বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে। এখানে সবমিলিয়ে ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ; যার পুরোটাই করবে বিদেশিরা।
তিনি বলেন, আমরা ভূমি পেয়ে গেছি। মাস্টারপ্ল্যান হয়েছে। বে-টার্মিনালে দেশের সবচেয়ে গভীর চ্যানেল হবে। এটার ড্রাফট হবে ১২-১৪ মিটার। সব নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। সুখবর হচ্ছে এখানে তিনটি টার্মিনাল হওয়ার কথা ছিল। এখন চারটি টার্মিনাল হবে।
‘মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। টার্মিনাল-১ পরিচালনা করবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং টার্মিনাল-২ পরিচালনা করবে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি। দেড় বিলিয়ন করে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে তারা। একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল করবে দেশি প্রতিষ্ঠান। সেখানে হাফ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে’ বলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে তিন-চার বছরের মধ্যে নিজস্ব টার্মিনাল হবে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাতারবাড়ীতে দ্বিতীয় ধাপে ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণের জরিপ কাজ চলছে। এছাড়া সাপোর্ট ভ্যাসেল সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যাতে টার্মিনাল একদিনও বন্ধ না থাকে।’
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে এক দেড় বছরের মধ্যে সব ইকুইপমেন্ট চলে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর সাফল্যময় ছিল। আমাদের পরিবর্তন ও ঐতিহাসিক বছর ছিল। চমৎকার একটি চুক্তির মাধ্যমে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে আর বৈদেশিক আয় বাড়বে।’
‘পিসিটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সেখানে বিদেশিদের পাশাপাশি এদেশ থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের এখন প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া পিসিটিতে এক-দেড় বছরের মধ্যে সব ইকুইপমেন্ট চলে আসবে। এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে সারাবিশ্বে। এটা দেশের জন্য অন্যতম সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পিসিটিতে প্রতি বছরে আড়াই লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং ভাড়া দিতে হবে কার্যাদেশ পাওয়া বিদেশি অপারেটরকে। সেখানে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হোক বা না হোক। সবার কাছে হিসাব আছে বাংলাদেশের চাহিদা সম্পর্কে। বে-টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বিদ্যমান বন্দর জেটিতে লাইটার জাহাজ ও প্যাসেঞ্জার শিপ ভিড়তে পারবে।
কর্ণফুলী নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে ও বর্জ্য ঠেকাতে বন্দরের পক্ষ থেকে খালের মুখে নেট বসিয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রাম বন্দরের হার্ট। এ নদী আমাদের মায়ের মতো। নদী খনন, বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত করে যাচ্ছি। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। বর্জ্য ঠেকাতে বন্দরের পক্ষ থেকে খালের মুখে নেট বসিয়ে দেওয়া হবে।
এমভি আবদুল্লাহ নিরাপদে মুক্ত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে মন্তব্য করে মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি নিরাপদে মুক্ত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের আন্তরিকতা, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়েছে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের বন্দরের পর্ষদ সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) হাবিবুর রহমান, সদস্য (অর্থ) শহীদুল আলম ও সচিব ওমর ফারুক।