গ্রীষ্মকাল অনেকের কাছে পছন্দের হতে পারে, কিন্তু তাপপ্রবাহ আমাদের শরীরের জন্য অনেক সময় ক্ষতির কারণও হতে পারে। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে চলছে গ্রীষ্মের খরতাপ, স্বাভাবিকভাবেই জনজীবনে চলছে হাসফাঁস অবস্থা। আপাতত আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও নেই তীব্র গরম কমার কোন খবর। আর এই গরমে রোগ-বালাই এড়িয়ে সুস্থ থাকা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা এ সময়ে সুস্থ থাকার জন্য নানা পরামর্শ দেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক এবং পুষ্টিবিদ কেরি টরেন্স জানিয়েছেন যে কিভাবে তাপকে পরাস্ত করে গ্রীষ্মেও ঠান্ডা থাকা যায়। আমরা অনেকেই হয়তো সূর্য্যের আলো পছন্দ করি, কিন্তু অতি উচ্চ তাপমাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাপপ্রবাহ কারো কারো জন্য একটু বেশি ক্লান্তিকর এবং হিট ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও থাকে অনেকের। যাদের শারীরিক ওজন বেশি, বয়স্ক কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক, নিয়মিত কোন রোগের ওষুধ সেবন করছেন কিংবা যারা কোন দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
যাদের আগে থেকেই কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে যেমন হৃদরোগ বা বক্ষব্যাধী রয়েছে, এই গরম আবহাওয়ায় তাদের শরীরে উপসর্গ আরো খারাপ হতে পারে, ফলে তাদের সচেতন থাকাটা জরুরী। কারণ গরম আবহওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে আমাদের হৃদপিন্ড ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বেড়ে যায়। এই চরম আবহাওয়ায় আপনার নিজেকে এবং অন্যদের নিরাপদে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আপনি যখন বাইরে থাকেন কিংবা বাইরে বের হওয়ার চিন্তা করছেন বা জনসমাগম রয়েছে এমন কোথাও রয়েছেন তখন নিজেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করুন। এটা জানা জরুরী যে সব এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থাই একটানা বিরামহীনভাবে চালানোর জন্য অনুমোদিত। কিন্তু আপনার যদি কোন ধরণের সন্দেহ থাকে তাহলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই সেটি পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
তীব্র গরমে ঠান্ডা থাকার ৮ উপায়
গরমের সময় আপনার দেহে তরলের চাহিদা বেড়ে যায় কারণ ঘামের জন্য আপনার দেহ থেকে যে তরল বের হয়ে যায় তার ঘাটতি পূরণের জন্য অতিরিক্ত তরল পানের দরকার হয়। যে কারোরই পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে তবে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু এবং নবজাতকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পানিশূন্যতা দূর করার জন্য পানি পান করাটাই সবচেয়ে ভাল উপায়। এছাড়া কম চর্বিযুক্ত দুধ, চা এবং কফিও খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
হালকা এবং তাজা খাবার বেশি পরিমাণে হাওয়ার চেষ্টা করুন। দেহে পানিশূন্যতা দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে তাজা ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া। যেমন স্ট্রবেরি, তরমুজ, শশা, লাউ ইত্যাদি।
ব্যস্ত জীবনে সবসময় খাওয়া আর ঘুমের সময় ঠিক রাখা অনেকের জন্য কেবল কঠিনই নয়, কারো কারো জন্য সেটি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। কিন্তু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা বলেন সুস্থতার জন্য সেটি জরুরী। আর অন্য যেকোন সময়ের মত গরমেও ঠিক সময়ে খাওয়া এবং ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন।
এ সময়ে সম্ভব হলে হালকা, ঢিলেঢালা এবং উজ্জ্বল রঙের নয়- এমন কাপড় পরার চেষ্টা করুন। গরমে আরাম পেতে সুতি বা লিনেন কাপড় বেছে নিতে পারেন। এসব কাপড় ঘাম শোষণ করে এবং বায়ু চলাচলও স্বাভাবিক রাখে।
দিনের যে সময়টাতে সবচেয়ে বেশি সূর্য্যের তাপ বেশি থাকে, যেমন সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা- এ সময়টাতে সরাসরি তাপ এড়িয়ে চলুন। শারীরিক ব্যায়াম, ঘরের কোন ভারী কাজ যখন বাইরে আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে তখন করুন।
আবহাওয়ার খবরাখবর নিয়মিত রাখুন, এতে সরাসরি আপনার শরীরে শীতল অনুভূতি আসবে না তা সত্যি। কিন্তু মনে রাখবেন, পূর্বাভাস জানলে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবেন আপনি। এছাড়া গরম আবহাওয়ার কারণে বায়ু দূষণ বেড়ে যায়। তাই আপনার পরিবারে যদি কেউ শ্বাসযন্ত্রের কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তার বাইরে থাকার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরকার হলে ছাতা ব্যবহার করুন। যেখানে সম্ভব সানগ্লাস বা হ্যাট পড়ুন। আর সানস্ক্রিন ব্যবহারের চেষ্টা করুন, এতে আপনার ত্বক সরাসরি রোদে পোড়ার হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে।
আপনার শোয়ার ঘরটি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার ঘুমে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তীব্র রোদের সময়টুকুতে ঘরে যাতে সরাসরি তাপ প্রবেশ না করে, খেয়াল রাখুন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘরের পর্দা টেনে রাখুন। এছাড়া ঘরের মেঝে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
এমআই