দেশের পুঁজিবাজারে সার্বিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকে করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামীকাল সোমবার বিকাল ৩টায় বিএসইসির কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে রোববার (২১ এপ্রিল) মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং প্রধান ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের এ বৈঠকে ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, জানুয়ারিতে যখন শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বা বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হয়, তখন বাজার মধ্যস্থতাকারীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বাজারে বড় ধরনের পতন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম। কেন প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না, কোনো নীতি সহায়তার দরকার হবে কি না—এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারের টানা দরপতনে কোন কারসাজি চক্র জড়িত কিনা কিংবা দরপতনের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের ঘটনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের গত কয়েক দিনের লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা–ও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে বিধিবিধান না মানায় একটি ব্রোকারেজ হাউসের একজন অনুমোদিত প্রতিনিধি বা ট্রেডারকে তাৎক্ষণিকভাবে এক দিনের জন্য লেনদেন থেকে বরখাস্ত করেছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি একটি ব্রোকারেজ হাউসের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসটি থেকে একটি কোম্পানির শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে বিধিবিধান লঙ্ঘনের প্রাথমিক তথ্য পায় বিএসইসি। দিনের লেনদেনের শুরুতে বিএসইসির নিজস্ব সার্ভেইল্যান্স বা তদারকি ব্যবস্থায় এ ঘটনা ধরা পড়ে। তার ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই শেয়ার লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডারকে বরখাস্ত করা হয়। ফলে ওই ট্রেডার আগামীকাল সোমবার লেনদেন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারের দরপতনের পেছনে কোনো অনিয়ম বা কারসাজির ঘটনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একটি ব্রোকারেজ হাউসের একজন ট্রেডারকে এক দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে শেয়ার লেনদেনে বিধিবিধান লঙ্ঘনের দায়ে। বাজারের টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করেছি। তার ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক রয়েছে বলেও তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টানা দরপতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই মূলত এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়। প্রায় দুই মাস ধরে দরপতনের ধারায় রয়েছে বাজার।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ দিন শেষে ৩৩ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে। গত ৩৫ মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৯ মে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৬৪৬ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ১১৯ পয়েন্ট বা পৌনে ১ শতাংশ কমেছে।
সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ঢাকার বাজারে আজ রোববার দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৭৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৪ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে আজ লেনদেন হয় ১৭ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১ কোটি টাকা কম।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারের প্রতি এখন বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। টানা দরপতন চলতে থাকায় বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের অনেকে প্রতিদিনই বাজার ছাড়ছেন। এ ছাড়া যত বেশি দরপতন হচ্ছে, ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রিও তত বাড়ছে। সব মিলিয়ে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা নেই।
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ঈদের ছুটির আগের দুই দিন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও ছুটির পর প্রতিদিনই বাজারে দরপতন হয়েছে। ঈদের ছুটির পর পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ২১০ পয়েন্ট বা প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ কমে গেছে। এ প্রেক্ষাপটেই বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠকটি ডেকেছে।
এমআই