ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

সোনালী লাইফের পর্ষদ বরখাস্ত, নতুন প্রশাসক নিয়োগ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ছয় মাসের জন্য বরখাস্ত করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

গত ১৮ এপ্রিল আইডিআরএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। আজ রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় আইডিআরএ জানায়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ড বা স্থগিত করা হয়েছে। একইসাথে বিমা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌসকে (অব:)  কোম্পানিটিতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বীমা আইন ২০১০ এর ধারা-৯৫(১) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে আইডিআরএ।

জানা যায়, অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি, ক্যাশ চেকে বড় অংকের লেনদেন, এফডিআর জামানত রেখে বিপুল পরিমান ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যাংক সিগনেটরিরা প্রায় সকলেই একই পরিবারের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বীমাকারী এমনভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।

নির্দেশনায়  আরও বলা হয়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান “হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানি”-কে নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণাদি পায় আইডিআরএ।

ফলে বীমাকারী ও বিপুল সংখ্যক বীমা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার্থে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে কোম্পানিটিতে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আইডিআরএ জানিয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসক বিমা আইন ২০১০–এর ৯৬ (১) ধারা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। পাশাপাশি বিমা আইনের ৯৫ (৩) ধারা অনুসারে বিমা পলিসি ইস্যুসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

নিয়োজিত নতুন প্রশাসক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্ধারিত মাসিক সম্মানী ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভাতা পাবেন। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি যোগ্য দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যা জানালো তদন্ত কমিটি

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। কোম্পানিটি তাদের প্রতিবেদনে সোনালী লাইফের একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেছে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সোনালী লাইফ কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের পরিচালকের নামে মোট ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ইস্যু করে। যার মাধ্যমে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করা হয়। এছাড়া কোম্পানি পরিচালকেরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর করে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পরিবারের ৭ জন সদস্যকে কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছে। এতে নানান উপায়ে এসব পরিচালক কোম্পানির নামে টাকা আত্মসাৎ করতে থাকে। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের অর্থ আত্মসাৎ, ইম্পেরয়িাল ভবনে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ, চেয়ারম্যানের নিজস্ব মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ অর্থ প্রদানসহ নানান দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছে হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানি। যার কিছু বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বীকার করেছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা।

এছাড়া কোম্পানির ঘোষিত ডিভিডেন্ডে অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড বাবদ বিবিধ খাত থেকে রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নূর এ হাফজাকে অবৈধভাবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ, অবৈধভাবে বেতন প্রদান, অপ্রয়োজনীয় নানাবিধ ব্যয় দেখিয়ে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিদ্যমান পর্ষদ বছরে গড়ে ২২ কোটি বা মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা পেটি ক্যাশ হিসেবে ব্যয় করেছে এবং এর এককালীন বড় অংকের লেনদেন ক্যাশ চেকে হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও অর্থ তসরূপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার