২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ১৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।ফলে নতুন করে সুবিধা পাবে বাংলাদেশসহ সংস্থাটির সদস্যভুক্ত দেশসমূহ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ কার্যালয়ে শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠক-২০২৪। ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এই বৈঠক শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল)।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব থেকে ১৯০টি দেশের গভর্নর, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক যোগ দিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে অংশ নেন আগত অতিথিরা।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, উন্নয়ন, নীতিমালা সংস্করণ, সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবছর এ বৈঠকের আয়োজন করে সংস্থাটি।
সংস্থাটি জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ কোটি লোকের কাছে মানসম্পন্ন, সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশগুলোকে সহায়তা করতে একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করা হলো। স্বাস্থ্যসেবা একটি মৌলিক অধিকার। একজন ব্যক্তির জীবনের নানা পর্যায়ে যেমন- শৈশব, শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে সঠিক সময়ে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ একশ’র বেশি দেশে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবায়ে সহায়তা করেছে। দেড়শ কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কৌশল হিসেবে তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। অসংক্রামক রোগসহ একজন ব্যক্তির সারাজীবনের কাভারেজ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মা ও শিশু স্বাস্থ্য থেকে ফোকাস প্রসারিত করা। দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম, শহরে নানা অপারেশন সম্প্রসারণ করা। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ফি এবং অন্যান্য আর্থিক বাধা কমাতে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় পাল সিং বাঙ্গা বলেছেন, ‘মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যে কোনো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মানুষ যতোই সুস্থ্য থাকবে ততোই দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা একক প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত হবে না। এটির জন্য অংশীদারদের প্রয়োজন হবে, সরকারি ও বেসরকারি খাতের একটি জোটও দরকার। স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে সব মানুষের অ্যাক্সেস বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে গুরুতর আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, সংঘাত, সামাজিক বার্ধক্য এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ মিলিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর ঘাটতি হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থায়ন, জ্ঞান এবং অংশীদারত্ব দিয়ে বিশ্ববাসীর পাশে থাকবে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ফলাফল অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জন্য শক্তিশালী অংশীদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ বেসরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে হাতে-কলমে-দ্রুত এবং আরও ভালোভাবে কাজ না করলে স্বাস্থ্যখাত দুর্বল হয়ে পড়বে।
শহর এলাকায় ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বাংলাদেশকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ‘আরবান হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং সাভার ও তারাবো পৌরসভা এলাকায় ডেঙ্গুসহ সাধারণ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা এবং মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হবে ওই অর্থ।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে আওতায় স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা দেওয়া হবে। বাংলাদেশের মতো একশ’র বেশি দেশে স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি।