পাকিস্তান ও আফগানিস্তানজুড়ে বজ্রপাত, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা এবং ভূমিধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মঙ্গলবার উভয় দেশের কর্মকর্তারা প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটিতে ঝড়ের আঘাতে অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন। দেশের জরুরি পরিষেবা সংস্থাকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানের কর্তৃপক্ষও একই দিনে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তানে বেশিরভাগ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়। ওই প্রদেশে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালা উপড়ে গেছে।
বৃষ্টিতে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশে কয়েক ডজন বাড়িঘর ধসে পড়েছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সেখানে অন্তত ২১ জন মারা গেছেন। চলতি সপ্তাহে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র বলেছেন, সেখানে ২১ জন মারা গেছেন।
রাজধানী ইসলামাবাদেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ার ও বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) আবহাওয়ার তীব্র পরিস্থিতির পূর্বাভাসের মাঝে জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএনডিএমএ) জানিয়েছে, মৌসুমী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট প্রবল বন্যায় আফগানিস্তানে গত কয়েক দিনে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৩৬ জন।
দেশটির তালেবান নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষ বলেছে, বৃষ্টি-বন্যা-ভূমিধসে ছয় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০০ গবাদি পশু মারা গেছে। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বন্যায় কৃষি জমির বিশাল এলাকা এবং ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল) রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগে দেশটির অন্তত ২৩ হাজার পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ২০টিতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।