কয়েক বছরের আলোচনার পর বিদ্যমান অভিবাসন বিধি ঢেলে সাজানোর অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০১৫ সাল থেকেই অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক ইইউ অ্যাসাইলাম অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্যাক্ট নিয়ে আলোচনা চলছিল। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি কার্যকর হবে। এর মধ্য দিয়ে ইইউয়ের অভিবাসন বিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।
যদিও ইইউভুক্ত কিছু দেশ চুক্তির কিছু অংশের বিরোধিতা করেছে। তবে আশা করা হচ্ছে চলতি এপ্রিল মাসের শেষের দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে চুক্তিটি সম্পূর্ণ অনুমোদন পাবে। আশ্রয় প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে এবং অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরানোর জন্য এ চুক্তিটি করা হচ্ছে। এছাড়াও এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে শরণার্থীদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়েও বলা
হয়েছে।
গত বছর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। ২০১৬ সালের পর থেকে যা সর্বোচ্চ।
প্রস্তাবিত বিধির অধীনে ইইউভুক্ত ২৭টি দেশকে হয় ইতালি, গ্রিস ও স্পেনের মতো দেশগুলো থেকে হাজার হাজার অভিবাসীকে নিতে হবে, নয়তো এসব দেশের জন্য ইইউয়ের তহবিলে অর্থ প্রদান করতে হবে।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, শরণার্থী প্রত্যাশীদের আগেই ইউরোপীয় অঞ্চলে প্রবেশ করতে না দিয়ে আগে তাদের আবেদনগুলো সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আর আবেদনগুলো গৃহীত না হলে একই সময়ের মধ্যে তাদের নিজ দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে।
অভিবাসাীদের ইউরোপে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাত দিনের কিছু কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিরাপত্তা পরীক্ষা ইত্যাদি। ছয় বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী অভিবাসীদের বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করা হবে।
অভিবাসন চুক্তিটিতে প্রধান দুটি দল মধ্য-ডানপন্থী ইউরোপিয়ান পিপল’স পার্টি গ্রুপ (ইপিপি গ্রুপ) ও মধ্য-বামপন্থী প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস (এসঅ্যান্ডডি) সমর্থন দিয়েছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এটিকে ‘ঐতিহাসিক ও অপরিহার্য পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছেন। ইউরোপীয় পার্লাামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মেটসোলা বলেছেন, এটি ‘সংহতি ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য’ এনেছে।
হাঙ্গেরি বলেছে যে চুক্তি সত্ত্বেও দেশটি অবৈধ অভিবাসীদের গ্রহণ করবে না। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক শরণার্থী প্রত্যাশীদের গ্রহণ করা বা ইইউয়ের তহবিলে দেশগুলোর জন্য অর্থ প্রদান করাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনেক সদস্য এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ আবার চুক্তিটি ‘নিখুঁত’ না বলে জানিয়েছেন।
পার্লামেন্টের স্লোভেনিয়ার প্রতিনিধি মাতজাজ নেমেক বলেছেন, এটি একটি আপস যা নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি। অন্যদিকে বেলজিয়ামের হিলদে ভতম্যান্স যদিও চুক্তিটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তবে তিনি বলেছেন যে চুক্তিটি ‘নিখুঁত নয়’। এদিকে বামপন্থী ও অতি ডানপন্থী দলগুলো চুক্তিটির বিরোধিতা করেছে।
বেশ কিছু এনজিও চুক্তিটি সংস্কারের বিষয়টি প্রত্যাখ্যানের জন্য পার্লামেন্টের সদস্যদের অনুরোধ জানিয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও সতর্ক করে জানিয়েছিল যে চুক্তিটি আশ্রয়প্রার্থীদের ‘দুর্ভোগ’ বৃদ্ধির কারণ হবে।