নতুন টাকার ব্যবসা আমারে দেশে নতুন নয়। ঈদ এলেই নতুন টাকা কেনাবেচার ধুম পড়ে যায়। এক হাজার টাকার নতুন নোট বিক্রি হয় এক হাজার ২০ টাকায়। এক্ষেত্রে পণ্যের মতো কমবেশি করে মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করা হয়। যেহেতু কাগজের নোট পণ্য নয়, তাই ইসলামে এই ব্যবসার অনুমোদন নেই।
শরিয়তের দৃষ্টিতে একইরকম দুই জিনিসকে কমবেশি করে ক্রয়-বিক্রয় করলে লাভের অংশটি সুদ হয়ে যায়। দেশি মুদ্রা একই প্রকারের হওয়ায় পরস্পর কমবেশিতে ক্রয়-বিক্রয় শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত অংশ সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (আদদুররুল মুখতার: ৫/১৭১-১৭২; বুহুসুন ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা: ১/১৬৩)
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এই হারাম ও সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষকেই বিরত থাকতে হবে। যারা এটিকে উপার্জনের মাধ্যম বানিয়েছেন, তারা অবশ্যই হালাল উপার্জনের মাধ্যম খুঁজবেন।
সাধারণত মুদ্রার লেনদেন দুইভাবে হতে পারে। এক. ভিন্ন দেশের কারেন্সির লেনদেন। দুই. একই দেশের কারেন্সির লেনদেন। এক দেশের কারেন্সি আরেক দেশের কারেন্সির বিনিময়ে কম-বেশি করে বিক্রি করা জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রেও বৈঠকেই কমপক্ষে একপক্ষকে টাকাটি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে, তাহলে ক্রয়-বিক্রয়টি জায়েজ হবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়িল: ৪/২৮; জাদিদ মুআমালাত কে শরয়ি আহকাম: ১-১৩৯)
আর একই দেশের মুদ্রা হলে, পরস্পর লেনদেনে সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। কম-বেশি করে বিক্রি করলে ওই ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ হবে না। (হিদায়া, কিতাবুল বুয়ু, বাবুর রিবা: ০৩/৮৫; মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন: ০২/৬৫-৬৬; শারহু মাআনিল আসার: ৫৫৫৪; সুনান দারু কুতনি: ৩০৬০)
তবে, ছেঁড়া-ফাটা টাকা দিয়ে ভালো টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগ অবস্থায় (যেমন ব্যাংক বন্ধ, টাকাও দরকার ইত্যাদি) বদলকারীর পরিশ্রম ও ডাক খরচ বাবদ কিছু টাকা বেশি নেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, ছলনার আশ্রয় ছাড়া স্পষ্টভাবে ‘বাবত’ উল্লেখ থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, সাধারণত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ছেঁড়া-ফাটা টাকার বিনিময় সেবাটি দিয়ে থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে বিনামূল্যেই সেবাটি পাওয়া যায়। তাই রীতিমতো চেয়ার-টেবিল বসিয়ে এমন ব্যবসার যৌক্তিকতা নেই। এটি কঠিন গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদি লেনদেন থেকে হেফাজত করুন। আমিন
তথ্যসূত্র: বুখারী শরীফ: ২/৭৫০, মুসলিম: ৫/৪২, হিদায়া: ৩/১০৪ ও ৬১৮, আহসানুল ফতোয়া: ৭/২২, ২৩ ও ৫৪; ইফতা বিভাগ: পটিয়া জামেয়া।
কাফি