অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ছয় মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্যারেলপ্রতি ৮৮ ডলার স্পর্শ করেছে। ভূরাজনৈতিক সংকটের কারণে নতুন করে সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ায় বাজার আদর্শটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।
আইসিই ফিউচারস ইউরোপে জুনে সরবরাহ চুক্তিতে গতকাল ব্রেন্টের দাম আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ২৯ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৮ ডলার ৭১ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মে মাসে সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১ ডলার ৩০ সেন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৫ ডলার ১ সেন্টে।
বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরো বেশকিছু রুশ জ্বালানি অবকাঠামোয় নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। তার ওপর মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বড় পরিসরে ব্যাহত হচ্ছে।
ইউক্রেন গতকাল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় পরিশোধনাগারে হামলা চালায়। পরিশোধনাগারটি ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনের ১ হাজার ৩০০ মাইল দূরে অবস্থিত। যদিও রাশিয়ার দাবি তারা সফলভাবে এ হামলা প্রতিহত করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনের ড্রোন পরিশোধনাগারটির প্রাইমারি অয়েল রিফাইনিং ইউনিটে আঘাত এনেছে। এ পরিশোধনাগারের মোট বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকই (দৈনিক ৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল) ধারণ করে ইউনিটটি।
রাশিয়া বিশ্বের তিনটি শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশের একটি। এছাড়া পরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতেও দেশটির অবস্থান ওপরের দিকে। গত বছর থেকেই রাশিয়ার বিভিন্ন জ্বালানি তেল অবকাঠামোয় হামলা চালিয়ে আসছে ইউক্রেন। এতে দেশটির উৎপাদন সক্ষমতা বাধার মুখে পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে রফতানি।
এদিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলার প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাশদি। ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছে ইরান।
এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতকে আরো তীব্র করে তুলবে, ফলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ আরো সংকোচনের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়াতে গত বছর কয়েক দফায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি কমিয়েছে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। ফলে জ্বালানিটির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, উত্তোলন ও রফতানি কমানোর এ ধারা অব্যাহত থাকলেও চলতি বছর সরবরাহ উদ্বৃত্তে ফিরবে।
বর্তমানে জ্বালানি তেলের বাজারসংশ্লিষ্টরা আজ অনুষ্ঠেয় ওপেকের বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে আছে। বছরের বাকি সময়জুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানো হবে কিনা, তা এ বৈঠকে শেষেই জানা যাবে।
ওপেকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাচ্ছে। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও (এপ্রিল-জুন) উত্তোলন কমানোর এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।