পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন ছাড়া এনিডেস্কের মাধ্যমে সারাদেশে অবৈধভাবে ডিজিটাল বুথ চালানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদপুরে অবৈধভাবে শাহারাস্তি ডিজিটাল বুথ চালানো এবং গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও একাউন্ট ক্লোজ করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এসব অভিযোগ তুলে ধরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিকট চিঠি দিয়েছে ব্রোকারেজ হাউজটির ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী মো. মশিউর রহমান।
চিঠিতে বলা হয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও মো. কাউসার আল মামুন বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া এনিডেস্কের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ব্রাঞ্চ এবং ডিজিটাল বুথ পরিচালনা করে আসছেন। সেখানেও প্রতারণার ফাঁদ পাতছেন এই ব্যক্তি। বিভিন্ন ব্যক্তিকে কোম্পানির পক্ষে নিয়োগ দিয়ে স্বার্থ হাসিল শেষে আবার তাদের প্রত্যাহার করছেন। এতে বিনিয়োগকারীরা এবং ব্রাঞ্চ-বুথের কর্মকর্তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এতে আরও বলা হয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজে বিও অ্যাকাউন্ট (হিসাব নং ১২০৪৪৩০০৬৯৩৪৪৫১৪) খোলা ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট নিজের একাউন্টের পোর্টফোলিও, লেজার স্টেটমেন্ট জানতে কোম্পানিটির সিইওর কাছে যান। কিন্তু সিইও বিনিয়োগকারীর সাথে দেখা না করে উল্টো আশিকুর রহমান নামের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তাকে মেরে ফেলার হুমকি এবং বিভিন্ন প্রকারের ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন। একপর্যায়ে হাউজ ছাড়তে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী মশিউর রহমান এবং তার স্ত্রী ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয়ে গেলে সেখানেও তাকে হুমকি-ধমকির মাধ্যমে অফিস ছাড়া করা হয়।
জানা গেছে, বিনিয়োগকারী মো. মশিউর রহমান বিও নং-১২০৪৪৩০০৭১৯৯১৭৪, একাউন্টধারীর অনুমতি ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ও একাউন্ট ক্লোজ করা হয়। যা জন্য পুরোপুরি সিইও মো. কাউসার আল-মামুন দায়ী। ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মো. কাউসার আল মামুন অসাধু এবং দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি বলে লিখিত চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বিনিয়োগকারীদেরকে অশ্লীল গালিগালাজ, হুমকি-ধমকি, প্রাননাশের ভয়, পুলিশি ভয় দেখায়। তিনি সমগ্র দেশে বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া এনিডেস্ক দিয়ে অবৈধভাবে ডিজিটাল বুথ চালিয়ে আসছে।
এবিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মো. কাউসার আল মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মশিউর রহমান নামের যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের গ্রাহক না। তিনি আমাদের অফিসের সাবেক স্টাফ। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তিনি বিও অ্যাকাউন্ট করেন। তবে তার অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়নি। মশিউর রহমান তার কাছে ৪০ লাখ টাকা চাদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ করেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও।
বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া এনিডেস্কের মাধ্যমে চাঁদপুরে শাহারাস্তি ডিজিটাল বুথসহ সারাদেশে অবৈধ ডিজিটাল বুথ চালানোর অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, অবৈধ ডিজিটাল বুথ চালানোর অভিযোগটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইতিমধ্যে বিএসইসি ও ডিএসই তদন্ত করেছে এবং এটি যে মিথ্যা তা প্রমান পেয়েছে। সবগুলো বুথে বিএসইসির অনুমোদন রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অর্থসংবাদের হাতে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর এবং শাহরাস্তি উপজেলায় দুটি ডিজিটাল বুথ খুলে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ। সদর উপজেলার আদর্শ মুসলিম পাড়ায় খোলা ডিজিটাল বুথের দায়িত্বে ছিলো মো. নুরুন্নবী এবং মশিউর রহমান। সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হলেও দশ মাস পর্যন্ত তারা কোন বেতন বা পারিশ্রমিকের মুখ দেখেননি। এমনকি দশ মাস পর হুট করে ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে চাঁদপুরের বুথটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও মো. কাউসার। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন অফিসটি পরিচালনা করা নুরুন্নবী এবং মশিউর রহমান।
বিএসইসিতে পাঠানো চিঠিতে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইওকে অপসারন করা, শাহরাস্তি ডিজিটাল বুথ বন্ধ করে দেয়া এবং শাহরাস্তি বুথের ট্রেডার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আলমাস হোসেনকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি তুলে ধরেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের এই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে চাঁদপুরে একটি অবৈধভাবে ডিজিটাল বুথ চালিয়ে, পরবর্তীতে ২০২৩ সালের আগষ্টে বন্ধ করে দেয়। এতে স্থানীয় বিনিয়োগকারী অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আরও একটি ডিজিটাল বুথ অবৈধ ভাবে শাহরাস্তিতে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে চালিয়ে আসছিল। যাহা পরবর্তীতে অনুমোদন পায়। এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়মে হাউজ চালাচ্ছেন তিনি। শুধু তাই না বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল বুথে এজেন্ট নিয়োগ করে এজেন্টদের থেকে ব্ল্যাংক চেক নিয়ে পরবর্তীতে ব্ল্যাক মেইল করে। ইতিমধ্যে মাষ্টার ফিড এগ্রোটেকের এক পরিচালকের শেয়ার ও টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এবং ২০২৩ সালের ১ অক্টোবরে এক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক একচেঞ্জ বরাবর চিঠি দিয়ে অবগত করেছে, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইওর বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্তৃক বিনিয়োগকারীদেরকে ভয়ভীতি, পুলিশি ভয় ও প্রাননাশের হুমকি থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ ও ১৮ মার্চে দুইজন বিনিয়োগকারী কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দুইটি অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পায়নি। যাহা ছিল বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ট্রেডার মো. আলমাস হোসেন অনুমতি ছাড়া শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে এবং বিনিয়োগকারী মো. মশিউর রহমান বিও নং-১২০৪৪৩০০৭১৯৯১৭৪, একাউন্টধারীর অনুমতি ছাড়া একাউন্ট ক্লোজ করে। যাহার জন্য পুরোপুরি সিইও মো. কাউছার আল-মামুন দায়ী।
গত ৩ মার্চে চাঁদপুরের শাহারাস্তি ডিজিটাল বুথের ট্রেডার মো. আলমাস হোসেন একজন গ্রাহক মো. মশিউর রহমানকে আহত করে এবং গ্রাহক পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয় এবং গ্রাহক শাহারাস্তি মডেল থানায় জিডি করে। জিডি নং-১৮৯-০৪/০৩/২০২৪ইং।
গত ২৪ মার্চ এই ডিজিটাল বুথের গ্রাহকরা একটি চিঠির মাধ্যমে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে শাহরাস্তি ডিজিটাল বুথের ট্রেডার মো. আলমাস হোসেনকে প্রত্যাহার করে নতুন ট্রেডার নিয়োগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কে এম মিজানুর রশীদ চৌধুরী গত ১৩ মার্চে ৪/৫ জন বিনিয়োগকারীদের ওই হেড অফিসে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গেছে। তারা দুর্বব্যবহার করেছে তা শেয়ারবাজারের মার্কেটের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই) ও শেয়ার মার্কেটের ভাবমুর্তি এবং সুনাম রক্ষার্থে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও মো. কাউছার আল মামুনকে অবিলম্বে অপসারণ করার জন্য ও ট্রেডার মো. আলমাস হোসেনকে বহিস্কার করে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুঁজিবাজারের সু-শাসন প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
এসএম