আট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আয়কর পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই সঙ্গে বকেয়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এদিকে ১৫ শতাংশ হারে কর দেওয়া সংক্রান্ত রিট আপিল নিষ্পত্তি হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। একইসাথে ব্যাংক হিসাব খুলে না দিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

এনবিআরের একটি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো হলো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। এছাড়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে।

জানা গেছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার বরাবর ৪ মার্চ চিঠি পাঠান ঢাকা কর অঞ্চল-১১-এর উপ-কর কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। চিঠিতে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২১৪ ধারা মোতাবেক বকেয়া কর পরিশোধের জন্য বলা হয়। ২০০২-০৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ১৬ অর্থবছরে মোট ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা কর পরিশোধ করতে বলা হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে। সেই সঙ্গে তা ১৫ মার্চের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। কর প্রদানে ব্যত্যয় হলে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয় এনবিআরের ওই চিঠিতে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কর পরিশোধের জন্য এনবিআর থেকে চিঠি পেলেও ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে কোনো চিঠি এনএসইউকে দেয়া হয়নি। মূলত ব্যাংক থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। তাদের কাছ থেকেই ব্যাংক হিসাব জব্দের কথা প্রথম জানতে পারি। যেহেতু ভ্যাটের বিষয়টি এখনো সুপ্রিম কোর্টে প্রক্রিয়াধীন, তাই আমরা আইনজীবীকে জানিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র অবশ্য বলছে, প্রাইম ব্যাংকে পরিচালিত এনএসইউর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলো মর্মে ২৫ মার্চ চিঠি দেন উপ-কর কমিশনার জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। লিখিতভাবে রদ না করা পর্যন্ত ওই নোটিস বলবৎ থাকবে বলেও চিঠিতে বলা হয়।

২০০৭ সালের ২৮ জুন এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।’

২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।’

এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট করা হয়। ওই দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে আইনি লড়াই শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আদেশ দেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

অর্থসংবাদ/এমআই

শেয়ার করুন:-
শেয়ার