কোনো মসজিদে এক বা একাধিক দিন দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে অবসর নিয়ে সওয়াবের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ ইসলামে ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে নির্দেশ দিলাম, তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা বাকারা: ১২৫)
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি রমজানে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদা কেফায়া; কোনো মহল্লা বা এলাকা থেকে একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে এটি আদায় হয়ে যাবে। কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে। আর ইতিকাফের নিয়ত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি কেউ ইতিকাফের নিয়ত করে তা পূরণ না করে, তবে সে গুনাহগার হবে।
রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবিরাও করেছেন, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১,৮৬৮; মুসলিম, হাদিস: ২,০০৬)
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১,০৫৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর অহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৯৪)
কেউ যদি নির্দিষ্ট কোনো মসজিদে ইতিকাফ করার মানত করে তাহলে যে কোনো মসজিদে ইতিকাফ করলেই ওই মানত পূর্ণ হয়ে যাবে। ওই মসজিদেই ইতিকাফ করা জরুরি নয়। কারণ নির্দিষ্ট কোনো মসজিদে ইতিকাফের মান্নত করলে ওই মসজিদেই ইতিকাফ করা আবশ্যক হয় না; বরং অন্য মসজিদেও তা আদায় করা যায়।
তবে যে কয়দিন ইতিকাফের মানত করা হয়েছে, ওই দিনগুলো পূর্ণ করতে হবে। যেমন কেউ যদি মানত করে এই রমজানের শেষ দশদিন আমি অমুক মসজিদে ইতিকাফ করবো, তাহলে রমজানের শেষ দশ দিন যে কোনো মসজিদে ইতিকাফ করলে মানত পূর্ণ হয়ে যাবে।
এমআই