এ বছরের রমজান মাস একটু ভিন্ন। না শীত, না গরম। শীত বা গরম যে সময়েই রোজা হোক না কেন, রোজায় শরীরে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। কেননা প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এর কারণে গলা শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বল লাগা, মাথা ব্যথা দেখা দেয়। এসব লক্ষণের পানিশূন্যতার ফল। এ কারণে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে পরিমিত খাবার খাওয়ার পরিবর্তে পেট ভরে পানি পান করি আমরা।
আমরা মনে করি, এই অতিরিক্ত পানি সারাদিনের শুকিয়ে যাওয়া গলাকে ভিজিয়ে শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করবে। রোজায় খাদ্যাভ্যাসের পরিকল্পনা ও পরিবর্তনই পারবে আপনার শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে।
রোজায় শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ
১.তৃষ্ণা পাওয়া
২. গলা শুকিয়ে যাওয়া
৩. দুর্বল লাগা বা দুর্বলতা
৪. মুখ শুকিয়ে যাওয়া
৫. বুক ধড়ফড় করা
৬. মূর্ছা যাওয়া
৭. মাথা ব্যথা করা
৮.অবসাদ ভর করা
শরীরে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন তখনই দেখা দেবে, যখন শরীর পানি গ্রহণের চাইতে শরীর থেকে পানি বেশি বের হবে। আর না হয়, আপনি পানি কম পান করবেন। সেজন্যই রোজায় আমাদের ইউরিন আউটপুট অনেক কমে আসে। রোজায় শরীরের পানিশূন্যতা কমাতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। যেমন—
১. সাহরি ও ইফতারে শুধু পানি খাওয়ার ওপর বেশি জোর দেবেন না। কারণ শরীরের বিভিন্ন কোষে সে পানি পৌঁছানোর পর অবশিষ্ট পানি ইউরিন, ঘাম, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাই রোজায় সাহরি ও ইফতারে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সুষম, উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ খাবার। যেমন: লাল আটা, লাল চাল, ওটস, চিড়া, বাদাম, মিক্সড ডাল, শাক-সবজি ও ফল। পাশাপাশি থাকতে পারে ডিম, মাছ ও মাংস। এ খাবারগুলো সারাদিন এনার্জি দিয়ে যাবে আপনাকে।
২. চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন। সাহরিতে চিয়া সিড ভেজানো পানি বা হালকা চিনি দিয়ে চিয়া সিড অথবা তোকমার শরবত খেতে পারেন। কিংবা ইসুবগুল মিশিয়ে এক গ্লাস দুধ খেতে পারে। চিয়া সিড শরীরে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
৩. সাহরিতে প্লেটে রাখুন সহজপাচ্য মাছের সঙ্গে সবজির ঝোল, মিক্সড সবজি, আমের টক বা টমেটো দিয়ে পাতলা ডাল। আবার মুরগির পাতলা ঝোল দিয়েও ভাত খেতে পারেন। ডায়াবেটিক রোগীরা মুরগি আর সবজির পাশাপাশি ব্রাউন আটার রুটি ও টকদই রাখুন পাতে।
৪. ইফতারের প্লেটে রাখুন—খেজুর, আস্ত বা টুকরো করা কয়েক ধরনের ফল, শসা, দই, দই-চিড়া, কলা-দই-চিড়া, মাছ বা মাংসের কাবাব, লাচ্ছি, লাবাং, মাঠা, ছানা, আখের রস, বিটের জুস, ডাবের পানি, আখের গুড়ের শরবত, লেবু-পানি, ইসুবগুল বা তোকমার শরবত।
৫. ইফতারে খেতে পারেন আখের গুড়ের শরবত বা চিড়ার শরবত, বাঙ্গির জুস, তরমুজ ও স্ট্রবেরি স্মুদি, বেলের শরবত।
৬. ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। রান্না করা ছোলার সঙ্গে সালাদ, ফল খেতে পারেন। প্রয়োজনে খেতে পারেন সবজি খিচুড়ি, পাতলা মাছ বা মুরগির ঝোল দিয়ে সাদাভাত। তবে অবশ্যই শারীরিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
৮. রাতে খেতে পারেন শাক-সবজি, পাতলা ঝোলের তরকারি, সালাদ, ছোট মাছের চচ্চরি।
৯. তারাবির নামাজের সময় পানির বোতল নিয়ে যান মসজিদে, যেন পানি পান করা ব্যাহত না হয়। এ ছাড়া ইফতারের পর সাহরির আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু জেগে থাকবেন, অল্প অল্প করে পানি পান করে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন।
১০. সাহরিতে খেতে পারেন দুধ–কলা–ভাত, কিংবা ১ কাপ ননি তোলা বা লো ফ্যাট দুধ বা টকদই। চা–কফির পরিবর্তে খান জিরা-পানি বা আদা-পানি।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা