ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার থোক মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে তামার দাম। তবে শিগগিরই ধাতুটির বাজার আবারো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরে যাবে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
লন্ডন মেটাল এক্সেচেঞ্জে (এলএমই) সবশেষ কার্যদিবস শুক্রবার তিন মাস সরবরাহ চুক্তিতে তামার দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায়। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয় ৮ হাজার ৮৫৫ ডলার ৫০ সেন্টে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) তামার দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে পাউন্ডপ্রতি ৪ ডলার ১ সেন্টে নেমেছে।
তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহারসংক্রান্ত ঘোষণা দেয়ার এক সপ্তাহ পর ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। ডলারের বিনিময় হার বাড়লে তামাসহ এতে লেনদেন হওয়া পণ্যগুলো অন্য মুদ্রার ক্রেতাদের কাছে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। ফলে ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেন ক্রেতারা। এতে কমে যায় দাম।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে শুরু করে তামার দাম। গত সোমবার প্রতি টনের মূল্য দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৫ ডলার ৫০ সেন্টে, যা ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ওইদিন পর্যন্ত ধাতুটির দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীরা সাপ্তাহিক ছুটির আগেই বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিতে তামা বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। বিষয়টিও দাম কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, স্বল্পমেয়াদে দাম কমলেও দীর্ঘমেয়াদে বাড়বে। কারণ চীনের বিগলন কেন্দ্রগুলো পরিশোধিত তামা উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে ধাতুটির সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে শিল্প ধাতুটির দাম আবারো টনপ্রতি ৯ হাজার ডলারের গণ্ডি ছাড়াতে পারে। এমনকি কয়েক মাসের মধ্যে টনপ্রতি দাম ১০ হাজার ডলারেও পৌঁছতে পারে।
ধাতুটিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের অন্যতম নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। বৈদ্যুতিক উপকরণ ও শিল্প খাতের যন্ত্রাংশ তৈরিতে ধাতুটির ব্যবহার ব্যাপক। বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাসও তামার চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় প্রভাব রাখছে। দুই বছরের মধ্যে তামার বৈশ্বিক দাম ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষরা।
ফিচ সলিউশনের গবেষণা ইউনিট বিএমআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে স্থানান্তর এবং চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ডলারের সম্ভাব্য বিনিময় হার হ্রাস তামার বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলবে।
কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে ৬০টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিন গুণ করতে একমত। বিষয়টি তামার বাজারদর ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলবে বলে জানিয়েছে সিটিব্যাংক।
বিশ্বজুড়ে তামার নতুন খনিগুলো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। নিম্ন গ্রেড, অনুমোদন পেতে কঠোর প্রক্রিয়া, পরিবেশবাদীদের আন্দোলন, সামাজিক ও সরকারি নানা ইস্যু এবং ঊর্ধ্বমুখী করের মতো বিষয় খনিগুলোয় উত্তোলন বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ধাতুটির সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ তীব্র হচ্ছে। গোল্ডম্যান স্যাকস জানায়, চলতি বছর তামার বৈশ্বিক ঘাটতি দাঁড়াতে পারে পাঁচ লাখ টনে।