নিষেধাজ্ঞায়ও চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিকে প্রভাবিত করবে না জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ৫০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসবে।

রবিবার (২৪ মার্চ) বিকেলে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ওপর সিন্ডিকেট ও প্রতিযোগিতার প্রভাব শীর্ষক একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতা পণ্যের চাহিদার যোগান ও অন্য বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নিভর করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি ও বৈশ্বিক সংঘাতের মতো বিভিন্ন সমস্যা কখনো কখনো বাজারকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। কিন্তু সরকার বাজারে কোনো অনৈতিক আচরণ শনাক্ত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের চুক্তিকে প্রভাবিত করবে না। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসবে। ভারত থেকে আমাদের পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই ট্রেনে চড়েছে যা দর্শনা রুট দিয়ে দুই বা তিন দিনের মধ্যে পৌঁছবে।

বাজারের অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় সরকারের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার ১০ মিলিয়ন পরিবারের জন্য টিসিবির পরিবার কার্ডের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তা প্রদান করে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশীদ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. শফিকুজ্জামান, সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ, আইনি অর্থনীতিবিদ ও আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম.এস. সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে।

প্রধান উপস্থাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজার সিন্ডিকেশনের বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সরকার সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছে। আসলে মূল্য স্তর এবং মূল্য ওঠানামা মধ্যে পার্থক্য আছে। যেহেতু মানুষের আয় দামের ওঠানামার সাথে আনুপাতিকভাবে বাড়ছে না, তারা মূল্য স্তরের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তিনি একটি উন্নত সরবরাহ শৃঙ্খল, কৃষি পণ্যের সঠিক স্টোরেজ এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণের পরামর্শ দেন, বাজারের কারসাজি রোধে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

মূল বক্তব্য অনুসারে, ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্য সূচকের প্রবণতা প্রকাশ করেছে, এটি বিশ্বের জন্য মোটামুটি তিনগুণ বেড়েছে। যেখানে বাংলাদেশের জন্য পাঁচ গুণ বেড়েছে। তার মানে খাদ্যের মূল্য স্তরের পরিবর্তনগুলো সাধারণভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঘটনা দ্বারা চালিত হয়।

অনুষ্ঠানে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাজারের আনুষ্ঠানিকীকরণ, বাজারের অপূর্ণতা যাচাই করার ব্যবস্থা এবং তথ্যের ফাঁক কমানো অত্যাবশ্যক। পুলিশিং ও মূল্য নির্ধারণের মতো পদক্ষেপগুলো বিশেষত কৃষি পণ্যের জন্য বাজারের গতিশীলতায় কাজ করে না।

আইবিএফবির কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করে এর সভাপতি হুমায়ুন রশীদ বলেন, অনেক দিন থেকে এটা একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। চিনি, সয়াবিন তেল, চাল, আলু, খেজুরসহ অনেক পণ্যের দাম গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তিনি পণ্যের বাজারে বিনিয়োগকৃত কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি রোধ, সরবরাহ শৃঙ্খলা, বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি এবং সিন্ডিকেশন প্রতিরোধ ও বাজার স্থিতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, সব মূল্যবৃদ্ধি নিছক বাজারের সিন্ডিকেশনের ফল নয়। দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। দেশের কর ব্যবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তন হয়েছে যখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিসিসি সিন্ডিকেশন বা কোনো অসৎ আচরণ শনাক্ত করলে তার বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।

ডিএনসিআরপির শফিকুজ্জামান বলেন, কিছু অর্থনৈতিক তত্ত্ব দৃশ্যত বাংলাদেশের পণ্য বাজারে কাজ করে না। ভোক্তাদের আচরণ শিক্ষিত করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রয়োজন আছে। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যের বাজারের চাহিদা এবং উৎপাদনের ডেটা প্রাপ্যতা অত্যাবশ্যক।

ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কর আরোপের ছয় মাস আগে করের হার পরিবর্তনের ওপর করের প্রভাব পরিমাপের জন্য গবেষণা হওয়া উচিত। শুল্ক বাড়ানো সত্ত্বেও ফল আমদানি করা হলেও ভালো বিক্রি হচ্ছে যা বোঝায় সক্ষম ভোক্তা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আয় বৈষম্য এখন দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।

এম এস সিদ্দিকী বলেন, অর্থ সরবরাহ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিময় হার এবং সিন্ডিকেশন মূল্য বৃদ্ধির কিছু সাধারণ কারণ। সিন্ডিকেশনের ভুল সংজ্ঞার ফলে বাজার অর্থনীতির ধারণা ত্রুটিহীন নয়। তিনি অস্বাভাবিক বাজার মূল্যের পিছনে কারণগুলো নির্ধারণের জন্য দেশের বাজারের গতিশীলতার গভীরে ডুব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার