ব্রাজিলে টানা তৃতীয় বছরের মতো বাড়তে যাচ্ছে কফি উৎপাদন। দেশটির কফি খাতের ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা। ১৪৪ বছরে সপ্তমবার টানা তৃতীয় বছরের মতো উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে এর। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ কফি উৎপাদক ও রফতানিকারক। আগামী বছরও দেশটিতে উৎপাদনের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। ব্রাজিলে মূলত অ্যারাবিকা উৎপাদন হয় বেশি। তবে এ বছর সেখানে উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে রোবাস্তা কফি।
ব্রাজিলে দ্বিবার্ষিক চক্রে অ্যারাবিকা কফি উৎপাদন হয়। অর্থাৎ এক বছর উৎপাদন বেশি হলে অন্য বছর কম হয়। আবার এক বছর কম হলে অন্য বছর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র গরম আবহাওয়ার কারণে এ চক্র ভেঙে গেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ভয়াবহ খরা আর তীব্র তুষারপাতের কারণে বিপর্যয় নেমেছিল দেশটির কফি খাতে। এর পর থেকেই প্রতি বছর পানীয় পণ্যটির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখছে দেশটি।
বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবেলায় চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির কফিচাষীরা। বাড়ানো হয়েছে সেচের আওতা। শুষ্ক আবহাওয়ায় উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জোর প্রয়াস চালাচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ব্রাজিলের কফি রফতানিকারক গ্রুপের চেয়ারম্যান মারিকো ফ্যারেরা বলেন, ‘আগামী বছরও উৎপাদন বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।’
ব্রাজিলের খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা কোনাব জানায়, ১০ বছরের ব্যবধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়ে ৪৪ দশমিক ২ ব্যাগে (প্রতি ব্যাগে ৬০ কেজি) উন্নীত হয়েছে। অ্যারাবিকা কফি উৎপাদন ২৪ শতাংশ বেড়ে হেক্টরপ্রতি দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭ ব্যাগে।
কোনাবের প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ বছর ব্রাজিলে ৫ কোটি ৮০ লাখ ব্যাগ কফি উৎপাদন হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। তিন বছরে মোট উৎপাদন দাঁড়াতে যাচ্ছে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ব্যাগে।
ব্রাজিলে এমন সময় রোবাস্তা উৎপাদন বাড়ছে, যখন এটি উৎপাদনে বহুমুখী জটিলতায় পড়ছে ভিয়েতনাম। দেশটি রোবাস্তা উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সম্প্রতি সেখানে এর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দাম বেড়ে পৌঁছেছে ১৬ বছরের সর্বোচ্চে।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২৩-২৪ কফিবর্ষে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা রাখবে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলো। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের (আইসিও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ১৭ কোটি ৮০ লাখ ব্যাগ (প্রতি ব্যাগে ৬০ কেজি) কফি উৎপাদন হতে পারে, আগের বছর যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বাড়বে ৯৮ লাখ ব্যাগ।
সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর কফির বৈশ্বিক ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে। ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ব্যাগে, আগের বছর যা ছিল ১৭ কোটি ৩১ লাখ। যেসব দেশে পণ্যটি উৎপাদন হয় না, সেসব দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এর ব্যবহার বাড়ার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখবে।
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ কফি উৎপাদন হবে, তার ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ হিস্যাই থাকবে অ্যারাবিকার দখলে। জনপ্রিয় এ জাতের কফি উৎপাদন হতে পারে ১০ কোটি ২২ লাখ ব্যাগ, যা আগের বছর ছিল ৯ কোটি ৪০ লাখ। অন্যদিকে রোবাস্তা জাতের কফি উৎপাদন হতে পারে ৭ কোটি ৫৮ লাখে, আগের বছর যা ছিল ৭ কোটি ৪২ লাখ ব্যাগ।
আইসিও জানায়, চলতি বছর দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় কফি উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ব্যাগে উন্নীত হতে পারে। আফ্রিকার দেশগুলোয় উৎপাদন ১ কোটি ৭৯ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি ১ লাখ ব্যাগে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে।