২০২৩ সালে বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশ এবং তিনটি অঞ্চল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত বায়ু মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
সুইস কোম্পানি আইকিউএয়ার দ্বারা মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ১৩৪ টি দেশের ৩০ হাজারেরও বেশি স্থল-স্তরের বায়ু মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হতে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটারের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে মাত্র সাতটি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দেশগুলো হলো—অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড, মরিশাস এবং নিউজিল্যান্ড। এছাড়া আরও তিনটি অঞ্চল (ফরাসি পলিনেশিয়া, বারমুডা এবং পুয়ের্তোরিকো) এই মানদণ্ড পূরণ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, পিএম২.৫-এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। এই দেশগুলোর বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার বা ক্ষতিকর ‘পিএম-২.৫’ কণা ছিল নির্ধারিত সীমার নিচে অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে কম। এই জায়গাগুলোর বায়ুর গুণমান ডাব্লুএইচও মান অনুসারে নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটারে গড়ে বার্ষিক পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব ৯.১ মাইক্রোগ্রাম নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৩ তম কম দূষিত দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দূষিত শহর ওহাইও অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস শহর এবং সবচেয়ে কম লাস ভেগাস।
গত মাসে, মার্কিন পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা সূক্ষ্ম কণার জন্য কঠোর মানদণ্ড চূড়ান্ত করেছে, বার্ষিক মান প্রতি ঘনমিটারে ১২ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৯ মাইক্রোগ্রামে নামিয়ে এনেছে।
এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) এর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে সূক্ষ্ম কণা যুক্ত দূষিত বাতাসে (পিএম ২.৫) নিশ্বাস নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাঁপানির আক্রমণ এবং অকাল মৃত্যুর মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। দূষিত বায়ু মস্তিষ্কের অ্যালজাইমার রোগ এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ছানি, গ্লুকোমা, কনজাংটিভাইটিস এবং বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
আইকিউএয়ার গ্লোবালের সিইও ফ্র্যাঙ্ক হ্যামেস একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পিএম ২.৫ আমাদের ত্বকের কোষ থেকে শুরু করে আমাদের ফুসফুসের গভীর কোষ এবং এমনকি আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে প্রবেশ করে।’
‘বায়ু দূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি,’ যোগ করেন তিনি।
ইপিএ ২০৩২ সালের মধ্যে নতুন মানটি কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছে। সংস্থাটির মতে, এই কঠোর সীমা প্রায় ৪,৫০০ অকাল মৃত্যু রোধ করতে পারে এবং প্রতি বছর প্রায় ২৯০,০০০ কর্মদিবস বাঁচাতে পারে। তবে পিএম ২.৫ দূষণের জন্য ইপিএর সীমা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নির্দেশিকার চেয়ে বেশি রয়েছে।
আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে সূক্ষ্ম বস্তুকণা দূষণের বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ ছিল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের পিএম ২.৫-এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত সীমার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি ছিল। এছাড়া গত বছর সবচেয়ে দূষিত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে থাকা দেশগুলো হল— তাজিকিস্তান, বুরকিনা ফাসো, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল, মিশর ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো।
ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বার্ষিক প্রায় ৯ মিলিয়ন অকাল মৃত্যুর জন্য বায়ু দূষণ দায়ী ছিল। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জন বায়ু দূষণে মারা গেছে। এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।