দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সিএসইকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) বিধিমালা ২০২৩- অনুযায়ী প্রথমবারের মতো সিএসইকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে এ সনদ গ্রহণের সিএসইকে মানতে হবে একাধিক শর্ত। বুধবার (২০ মার্চ) বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব শর্ত উল্লেখ করা হয়।
এতে জানানো হয়, কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিবন্ধনের জন্য গত ১৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে বিএসইসির কাছে দাখিল করা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন, সাধারণ বিধি-বিধান, এজিবি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তিসহ কোন বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি ছাড়া সংশোধন, প্রতিস্থাপন কিংবা বাতিল করা যাবে না। একইসাথে নিবন্ধিত সনদটি বিক্রি, বন্ধক, ইজারা বা অন্যথায় হস্তান্তর বা কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজন মোতাবেক দৈনিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, অর্ধ-বার্ষিক এবং বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে সরবরাহের নির্দেশ দিয়ে বিএসইসি জানায়- কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সাথে জড়িত সকল পরিচালক, কর্মকর্তা, ট্রেক হোল্ডার বা পণ্য ডেরিভেটিভস ব্রোকারদের কমিশনের সাথে আদেশ, নির্দেশিকা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টররা ইস্যু তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের সব শেয়ার স্টক বা সিকিউরিটি লিংকওয়ের মাধ্যমে স্থানান্তরের আগে কোম্পানির কোন শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একটি হলফনামা দাখিল করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
বিএসইসি কর্তৃক কমোডিটি এক্সচেঞ্জের এই সনদ স্থগিত বা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তা বৈধ থাকবে। এ ব্যাপারে কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও শর্তারোপ করার অধিকার রাখে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো অনেকটা স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ার কেনাবেচার বাজারের মতো। স্টক মার্কেটে বহু কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার বিক্রি করে এবং তা কিনে নেন বহুসংখ্যক বিনিয়োগকারী। কমোডিটি এক্সচেঞ্জও তেমনই। তবে, এখানে শেয়ার নয়, পণ্য কেনাবেচা হয়। এই পণ্য কেনাবেচা সাধারণ পাইকারি বাজারের মতো নয়। বড় পাইকারি দোকানে (পাইকাররা যাকে মোকাম বলেন) ক্রেতা ও বিক্রেতা সরাসরি দর-কষাকষি করে পণ্য কেনাবেচা করেন। কিন্তু, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে ক্রেতা ও বিক্রেতার সরাসরি পণ্য কেনাবেচার সুযোগ নেই। অনেকটা শেয়ারের মতো বিক্রেতার দেওয়া পণ্যের সার্টিফিকেট (সনদ) বিক্রি হয়। মান সনদ দেখেই পণ্যের গুণগত মান বিষয়ে নিশ্চিত হন ক্রেতা এবং অন্য দেশে থেকেও শেয়ার কেনাবেচা করেন।
শেয়ারবাজারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত ব্রোকারের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করতে হয়। থাকতে হয় নিজ বা প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট। একেবারে স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার কেনাবেচার মতো ব্যাপার। তবে, এই বাজারে পণ্য কিনে তা ডেলিভারি না নিয়ে ক্রয়কৃত সার্টিফিকেট অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হয়। অনেকটা মিলগেটে ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও কেনাবেচার মতো।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জে মূলত খনিজ ও কৃষিপণ্য কেনাবেচা হবে। শুরুতে তিনটি খনিজ পণ্যকে তালিকাভুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে। তালিকাভুক্ত পণ্য কেনাবেচা হবে ক্যাশ সেটেলমেন্ট ও নন-ডেলিভারি ক্যাশ সেটেলমেন্টের মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতিতে।
অর্থসংবাদ/এমআই