বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও মননে বহমান

বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক জ্বলন্ত সূর্য্য, দেশ ও মানুষের নেতা যিনি বলেছিলেন আমি ক্ষমতা চাই না, আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। পরাধীনতার শিকল ভাঙার জন্যে তিনি সকলকে যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। কোটি জনতা যাদের ভালোবাসা ও আবেগের মধ্যে রয়েছে একটি নাম তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিক্ষার্থীদের মননে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গভীর চিন্তা ও ভাবনা তুলে ধরছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অর্থসংবাদ প্রতিনিধি মো. সাকিব আসলাম।

প্রত্যয় হোক জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার
সাল ১৯২০,১৭ মার্চ।
মহাকালের অতি প্রাচীন নিয়মের মত প্রভাতের পূর্ব আকাশের রাঙা হয়ে সূর্য উঠেছিল। সেদিন হয়তোবা সকলে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু একজন মানুষ চিন্তার বোধ হয় একেবারে হাপিয়ে উঠেছিল। ঠিক কিছুক্ষণ পর যেন তিনি শুনতে পেলেন তার ঘরে আলোকিত এক ফুটফুটে শিশু এসেছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সেই শেখ পরিবারের কথায় এতোক্ষণ যে কার আসার কথা বলছিলাম সকলে তা বোধহয় বুঝে নিয়েছেন। সাধারণত ভাবে মানুষ হয়তো ভেবেছিল এ শিশুটিও হবে এক ক্ষন জন্মা। নশ্বর এ পৃথিবীতে সেই কিছুদিন বিচরণ করার পর আবারও কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

কিন্তু তা হয়নি, বাবা শেখ লুৎফর রহমানের রাখা নাম খোকা, হয়েছিল এক মহাপুরুষ। যিনি এক জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। কখনো বন্ধু কখনো নেতা আবার জাতির আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখিয়েছেন পথভোলা সামরিক শাসন ও হানাদার বাহিনীর যাতায় পিষ্ট বাঙালী জাতিকে।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ লক্ষকোটি বাঙ্গালীর এক আশা ভরসা ও আস্থার নাম। যে নামের মানুষটিকে চিনতে ভুল হয়না কারো। তার করে যাওয়া কাজের কথা মনে করে অজান্তে চোখের কোণা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কারণ যে মানুষটি না থাকলে আজকে বাংলাদেশ থাকত না। ঘাতকের যাতা কল থেকে দেশকে বের করে আনতে, শোষণের হাত থেকে দেশকে ছাড়িয়ে নিতে, অন্যের পরাধীনতা থেকে নিজেদের স্বাধীন করতে, নিজের জীবনকে বাজি রেখেছেন বারংবার। সদ্যজাত সন্তানের মুখ দেখা হয়নি অনেকদিন, যার কারণে নিজ ছেলে বাবাকে চিনতে ভুল করছে অনেকদিন।

পাওলো কোহেলোর মতে When you want something the whole world start conspired to achieve it. ঠিক যেন তিনি এই অর্জনের ফিসফিসে শব্দটাকে স্পষ্ট শোনার জন্যে ছুটে বেরিয়েছেন হাজারো দিন। পরিবার স্বজন সকল কে ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন,জেল খেটেছেন বহুদিন। তবুও তার যেন কোন ক্লান্তি নেয়। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সান্টিয়াগো যেমন মার্লিন মাছ কে ধরে রেখেছেন প্রাণপণ চেষ্টায় ঠিক তেমনি তিনিও একইভাবে নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিয়ে দেশের হাল ধরে রেখেছেন যেমন করে হোক দেশকে স্বাধীন করতে হবে।

১৯৪৭ এর দেশভাগের পরে পূর্বপাকিস্তান সৃষ্টি থেকে দেশকে স্বাধীন করা পর্যন্ত তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। দেশ ও মাটিকে আকড়ে রেখেছেন নিজের বুকে। দেশের মানুষকে যুদ্ধে অনুপ্রেরণা দিতে ৭ই মার্চ যে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন সেইটার বর্ণনা দিতে গেলে বুঝি পাতা শেষ হয়ে যাবে।

শুধুমাত্র দেশকে স্বাধীন করে নয়। একটা দেশকে কিভাবে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাড়াতে হবে সেইটাও তিনি দেখিয়েছেন। যুদ্ধপরবর্তী একটা ভাঙা মেরুদন্ড দেশকে কিভাবে দাড় করাতে হয় সেইটাও নিজ হাতে করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। আজ তিনি স্বশরীরে নেই। কিন্তু তার আত্মত্যাগ, তার দেখানো পথ, তার বুকে ধরণ করা স্বপ্নের বাংলাদেশ রয়েছে।

বাঙালির জাতির পিতা,হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, সর্বকালের সেরা নেতা,বাঙালি জাতির আলোর দিশারী,বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আজকের জন্মদিনে জানাই হাজার কোটি শুভেচ্ছা। তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাঁর স্বপ্নে বোনা সোনার বাংলাদেশ। শুভ জন্মদিন হে সোনার বাংলার কারিগর।

আফ্রিদি হাসান, সমাজকল্যাণ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব ও অবদান বাঙালির বন্ধু ও পিতা হয়ে আজীবন রবে
মধুমতি নদীর তীরবর্তী অঞ্চল গোপালগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়া ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এক শিশু। পরিবারের স্নেনের দানের নাম খোকা। মাতামহ নাম রেখেছিল মুজিব। সেদিনের সে খোকাটি আজ দেশ ও দশের কাছে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হিসেবে। মধুমতির জল আজ গড়িয়েছে, কতশত হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সে, সেই সাথে মধুমতির স্মৃতির মনসপটের ১৯২৪ সালের ১৭ই মার্চ থেকে ১৯২৪ সালের ১৭ই মার্চ পর্যন্ত আমাদের বন্ধু, বঙ্গের বন্ধুর সকল ইতিহাস কথার ধারক হয়ে এখনো বহমান।

কথায় বলে ‘গবরেও পদ্মফুল ফোটে’ তেমনি আজ আমাদের স্বাধীন বাঙ্গালিদের ইতিহাসে এক সাধারণ খোকা শেখ মুজিবুর রহমানের পদ্মফুল হয়ে ওঠার গল্পটা ভীষণ সংগ্রামের ও তেজদীপ্তময়। প্রত্যন্ত গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবার, যে পরিবারের ছিল না কোন রাজনৈতিক যোগসূত্র, এমন একটি পরিবারে সাধারণ খোকা থেকে এক বিশাল রাজনৈতিক নেতা ও তার নেতৃত্বগুণে গোটা বাঙালি জাতির পিতা হয়ে ওঠা, একটি দেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করা। বাঙালী জাতির কেড়ে নেওয়া মুখের ভাষা ছিনিয়ে আনা, ভীষণ দেশপ্রেমী, মানবদরদী হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব আমাদের পদ্মফুল এবং আজ ১৭ মার্চ ২০২৪ তার ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোরদের ভীষণ পছন্দ করতেন, তিনি তৎকালীন সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সবার আগে শিশুদের গড়ে তোলার প্রয়াশ করেছিলেন। এবং তিনি নিজেও সরল ও শিশুসুলভ স্বভাবের ছিলেন। তাই তো ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শিশুদিবস পালন করা হয়।

আজ মানুষটি আমাদের মাঝে শারীরিক ভাবে নেই, কিন্তু তার অস্তিত্ব কখনোই মুছে যাবে না। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা যে নাম, বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্নের সাথে জুড়ে আছে যে নাম তা কি আর কখনো ক্ষয়ে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু থাকবেন, বাঙালী থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে। তিনি মৃত্যুর পরও তার অস্তিত্ব ও অবদান সমুহ বাঙালির বন্ধু ও পিতা হয়ে আজীবন আমাদের ছায়া দিয়ে যাবে।

উমাইয়া ঊর্মি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

১৮ মিনিট থেকে ১৮ বছরে প্রবাহমান যিনি
সেদিন ছিল ১৭ই মার্চ, টুঙ্গীপাড়ার এক বাড়িতে, আনন্দের ধ্বনির সাথে ভেসে এলো শিশুর কান্নার আওয়াজ। দিনটি ছিল এক সম্ভাবনাময় তরুণের আগমনের। বাবা মা পরম মমতায় ডেকেছিলেন খোকা বলে। দরদি মনোভাবকে অবলম্বন করে ধীরে ধীরে খোকা হয়ে উঠেছিল অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ। মানুষের জন্য ইতিবাচক ভাবনায় তার প্রথম উৎসাহ ছিল ‘মা’। মানুষের প্রতি দরদি মনোভাব তার দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। খোকা নিজেকে জড়িয়ে নেয় রাজনীতির দাবানলে। যে আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে খাটি সোনায় পরিণত হন তিনি। সকলের স্নেহের ছোট্ট খোকা হয়ে ওঠে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন ‘জাতির জনক’। কতশত শত্রুদের মোকাবিলা করেছেন। জীবন তাঁর সংশয়াপন্ন জেনেও শত্রুদের মুখোমুখি হয়েছেন। শত্রুদের কোনো প্রলোভনেই তিনি মাথা নুয়াতে পারিনি। মিথ্যা দোষে সাজা পেয়ে জীবনের অর্ধেক সময় কেটেছে তার অন্ধকার কারাগারের নির্জনতায়। নানান বৈষম্যের স্বীকার হওয়া বাঙালি জাতির অধিকার বুঝে দিতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। শত্রুর ধারণার সময়কে ব্যতিরেকে; ১৮ মিনিটের ভাষণটি পৌছে গেল ১৮ বছরের তরুণ প্রজন্মের রন্ধ্রে। জেগে উঠলো বাঙালি সত্তার। শত্রুরা পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলো।

খোকা থেকে ‘জাতির জনক’ এভাবে ছিলেন তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের আদর্শের ধারক। তিনি এমন এক জাতির রূপকার, যাদের কথা আজ বিশ্ব স্মরণ করে। পরাশক্তির মনে যাদের কথার উদিত হলে, ভয়ে শিহরণ সৃষ্টি হয়। আমাদের মতো তরুণ প্রজন্মকে তিনি জাগিয়েছেন। আজও তার আদর্শকে লালন করে, তাজা প্রাণ হয়ে ওঠে বিদ্রোহী, পূণরায় হয়ে ওঠে মানব দরদি।

১৮ মিনিট থেকে ১৮ বছর এভাবেই তিনি প্রবাহমান। তরুণ প্রজন্মের হৃদয় স্পন্দন। কিংবদলির মত্য হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন। ১৮ বছরের তরুণ প্রজন্মের রন্ধ্রে। জেগে উঠলো বাঙালি সত্তার। শত্রুরা পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলো। ১৮ মিনিট থেকে ১৮ বছর এভাবেই তিনি প্রবাহমান। তরুণ প্রজন্মের হৃদয় স্পন্দন। কিংবদন্তির মৃত্যু হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন ১৮ এর হৃদয়ে।

সুরাইয়া, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার