বেশ কয়েকটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ভাতা বিতরণ করা হলেও তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে এবার শুধু নগদের মাধ্যমে এই সহায়তা বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
যেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালে মাধ্যমিক ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিকৃত ও অধ্যয়নরত অসচ্ছ্বল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে ভর্তি–সহায়তা দেয়া হবে। ভর্তি–সহায়তা পেতে তখন শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অনলাইনে অবেদন করতে বলা হয়।
এই সহায়তা পাওয়ার জন্য মা–বাবা বা অভিভাবকের বার্ষিক আয় দুই লাখ টাকার কম হতে হবে। এ ছাড়া সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীর সন্তানেরাও আর্থিক অনুদান পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে।
ভর্তি–সহায়তা পেতে শিক্ষার্থীদের ছবি, স্বাক্ষর, জন্মনিবন্ধন সনদ, অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র, নির্ধারিত ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশ থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫৪ লাখ অসচ্ছ্বল শিক্ষার্থীর স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে সহায়তা দেবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। এই সহায়তা বিতরণ করা হবে নগদের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে টাকা পেতে অসচ্ছ্বল শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করেছে। শিগগিরই এই সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম শুরু হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতি পাঁচ হাজার টাকা এককালীন শিক্ষা সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতদিন নগদসহ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং এমনকি ব্যাংকের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এই সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণ করতে গিয়ে তারা বেশ কিছু সমস্যায় পড়েন।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সহায়তার টাকা ঠিকমতো বিতরণ হয়েছে কি না সেটা পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই-বাছাই করাই আমাদের জন্য প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আমরা একটি প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিতে চেয়েছিলাম। আর গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি যেহেতু নগদ সাফল্যের সঙ্গে বিতরণ করে আসছে, সে কারণে আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়াও সহজ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, একেক প্রতিষ্ঠান একেক পদ্ধতিতে কাজটি করায় তাদের জন্য শিক্ষা সহায়তা বিতরণে কিছুটা সমস্যা হয়ে দাড়ায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নগদের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় এক হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়। সেখান থেকেই প্রতিবছর মাধ্যমিক, উচ্চামাধ্যমিক এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন সহায়তা দেয়া হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ হাজার টাকা এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে ভর্তি–সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নগদের নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের ভাতা ও সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়াকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছি, যেখানে ধারে কাছে আর কেউ নেই। সে কারণেই হয়তো সরকারি সংস্থাগুলো নগদের সেবাই বারবার নিতে চাইছ।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সহায়তা বিতরণ একটি স্পর্শকাতর প্রকল্প। এর বিতরণের দায়িত্ব নগদের কাছে আসার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। নগদের খরচও অনেক কম। এসবই নগদকে সব সময় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।