আরো লম্বা সময় ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ওপেক প্লাস। উদ্দেশ্য বাজারে সরবরাহ কমিয়ে আনা। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও এশিয়ার দেশগুলো সরবরাহ সংকট কিংবা ঘাটতিতে পড়বে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ধারা অব্যাহত রেখেছে ওপেক প্লাস। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এ নীতি বহাল রাখবে জোটটি। তবে জোটসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত উত্তোলন কমাতে পারে ওপেক প্লাস।
বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওপেক জোটের বাইরের উত্তোলক দেশগুলো থেকে এ বছর সরবরাহ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে। ওপেক প্লাস ও রাশিয়ার কারণে বাজারে যে ঘাটতি তৈরি হবে তা অনেকটাই পুষিয়ে দেবে নন-ওপেক দেশগুলো।
ওপেক প্লাসে প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমালেও বাজারে এর প্রভাব খুব বেশি পড়ছে না। বৈশ্বিক চাহিদার প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ধীর হচ্ছে এশিয়া অঞ্চলের চাহিদা প্রবৃদ্ধির গতিও।
নন-ওপেক দেশগুলো থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির বিপরীতে এশিয়ায় চাহিদা ধীর হয়ে যাওয়ার অর্থ বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানী তেলের লক্ষণীয় উদ্বৃত্ত তৈরি হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানিটির দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এক নোটে জানায়, নন-ওপেক দেশগুলোয় উত্তোলন প্রবৃদ্ধি ওপেক প্লাসের উত্তোলন প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাবে।
সৌদি আরব, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওপেক প্লাসের কয়েকটি দেশ ৩ মার্চ জানায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশগুলো প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর পরিকল্পনা করছে।
উত্তোলন কমানোর এ ধারা থেকে চলতি মাসেই সরে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত হারে দাম না বাড়ায় জোটটি সরবরাহে আরো লাগাম টানতে চায়।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এশিয়ায় তরল জ্বালানির চাহিদা দৈনিক ৩ লাখ ৫৩ হাজার ব্যারেল করে বাড়তে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে এটি ফের নিম্নমুখী ধারায় ফিরবে। ওই সময় প্রতিদিন ৫ লাখ ৮৩ হাজার ব্যারেল করে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে চীনে চাহিদা কমার মাত্রা থাকবে সবচেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওপেক প্লাসের উত্তোলন কমিয়ে দেয়া দূরপ্রাচ্যের আমদানিকারকদের জন্য এখন আর বড় কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের পরিশোধন কেন্দ্রগুলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে খুব বেশি সমস্যার মুখে পড়ছে না। এছাড়া রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, নন-ওপেক প্লাস উত্তোলকরা এ বছর বিশ্বজুড়ে দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, গায়ানা ও কানাডা থেকে নতুন করে সরবরাহ আসবে দৈনিক ১৪ লাখ ব্যারেল করে।