রোজায় রাখলে বা ফাস্টিংয়ের সময় যেহেতু দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা হয়, আর এ কারণে অনেকেরই মাথাব্যথা বেড়ে যায়। যদিও মাইগ্রেন, সাইনোসাইটিসসহ বেশ কিছু কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। তবে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে কেন মাথাব্যথা হয় তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাথাব্যথার কয়েকটি ধরন আছে। এর মধ্যে অন্যতম দুটি হলো, টেনশনটাইপ হেপঅ্যাক ও মাইগ্রেন। সাধারণত ৯৫ ভাগ মানুষের এসব মাথাব্যথা হয়। আর পাঁচ ভাগ মানুষের অন্যান্য কারণে মাথাব্যথা হয়।
যাদের আগে থেকে মাথাব্যথার রোগ আছে, দেখা যায় রোজা রাখার ফলে তা বেড়ে যেতে পারে। তবে যাদের মাথাব্যথার সমস্যা নেই, রোজার সময় তাদেরও মাথাব্যথা হতে পারে।
১৬ ঘণ্টারও অধিক সময় না খেয়ে থাকার ফলে মাথাব্যথা বাড়তে পারে। তবে এ ধরনের মাথাব্যথা আবার খাওয়ার পরপরই চলে যায়। উপবাস সংক্রান্ত মাথাব্যথা হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার হয়। এ ব্যথা কপাল থেকে শুরু হয়।
তবে যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের রোজায় মাথাব্যথা বাড়তে পারে। যদিও রোজা রাখার ফলে কেন মাথাব্যথা হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে এ সময় মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ হলো-
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া
হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে আসলে মাথাব্যথা হতে পারে। রক্তে শর্করার ছোট পরিবর্তনও মস্তিষ্কের ব্যথা রিসেপ্টরকে প্রভাবিত করতে পারে।
এতে রোজাদারদের মাথাব্যথা হয়। অনেক বিজ্ঞানী ব্লাড সুগার বেড়ে বা কমে যাওয়াকে রোজার মাথাব্যথার কারণ মনে করেন না।
ক্যাফেইন গ্রহণ না করায়
এছাড়া রোজা রেখে দীর্ঘক্ষণ কিছু না খাওয়ার কারণে ক্যাফেইন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন সবাই। যা ক্যাফেইনে আসক্ত তারা তা গ্রহণ না করার ফলে মাথাব্যথা হতে পারে।
পানিশূন্যতা
আবার রোজা রাখার ফলে দীর্ঘসময় শরীরে পানি প্রবেশ করে না, ফলে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়েও মাথাব্যথা হতে পারে। মানসিক চাপের কারণেও মাথাব্যথা হয় অনেকের।
এ বিষয়ে ফরাজী হাসপাতালের পুষ্টিবিদ রুবাইয়া রীতি বলেন, ‘রমজানে বেশিরভাগ মানুষেরই ঘুম ঠিকমতো হয় না। কারণ রাতে ঘুমানোর পরপরই আবার ভোররাতে অর্থাৎ সেহরির সময় ঘুম থেকে উঠতে হয়।’
‘আবার কেউ কেউ সেহরির পর ঘুমান। যা একটি খারাপ অভ্যাস। সব মিলিয়ে অনেকেরই পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। যার কারণে পরেরদিন মাথাব্যথা বাড়তে পারে। তাই কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।’
রোজা রেখে মাথাব্যথা সারাতে কী করবেন?
১. ইফতার থেকে সেহরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য তরল খাবার বেশি খেতে হবে।
২. যারা আগে থেকে মাথাব্যথার ওষুধ খান, তাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না।
৩. মাথাব্যথা কমাতে মাথা ও ঘাড়ে বরফের প্যাক লাগান। তবে ১৫-২০ মিনিটের বেশি লাগাবেন না।
৪. নিরিবিলি স্থানে বসে কিছুক্ষণ ধ্যানও করতে পারেন। এজন্য গভীরভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন।
৫. মাথাব্যথা কমাতে আকুপ্রেশারের সাহায্য নিতে পারেন। এজন্য বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর মধ্যেকার ভি স্থানের প্রেশার পয়েন্ট ম্যাসেজ করুন।
এতে মাইগ্রেন কিংবা যে কোনো মাথাব্যথা কমবে দ্রুত। ১৫-২০ সেকেন্ড বৃত্তাকার গতিতে অন্য হাত দিয়ে ম্যাসাজ করুন।
৬. মাইগ্রেনডটকমের পরামর্শ অনুযায়ী, মাথাব্যথা কমাতে কপালে পেপারমিন্ট তেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে ত্বকে জ্বালা করলেও পরে ঠান্ডা হলে আরাম পাবেন। চাইলে জোজোবা বা অ্যাভোকাডো তেলের সঙ্গে এক ফোঁটা পেপারমিন্ট তেল মেশাতে পারেন।
৭. মাথাব্যথা সারানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো চোখ বন্ধ করে একটি শান্ত ও অন্ধকার ঘরে বসে বা শুয়ে থাকা। ঘুমালেও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।