দেশে চলমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতিতে দৈনন্দিনের ব্যয় বহনে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। ফলে অতিরিক্ত খরচ সামলাতে জমিয়ে রাখা আমানতে হাত দিতে হচ্ছে। তাতে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খরচ মেটানোর কারণে চলতি বছরের প্রথম মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকার সঞ্চপত্র বিক্রি হয়েছে। আর আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৯ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এতে জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রে নতুন করে বিনিয়গ করছেন না গ্রাহক।
ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ এখন অনেকটাই সঞ্চয়বিমুখ। বরং আগের জমানো ডিপোজিট ভেঙে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তারা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতের আমানতের পরিমাণ ছিলো ১৬ দশমিক ৪০ লাখ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫৪ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অভ ট্রেজারি বিল) রেট ঘোষণা করার পর থেকে ক্রমাগত ব্যাংকঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়ছে। ফলে অন্যান্য খাত থেকে টাকা ব্যাংকে ঢুকছে। তাই ব্যাংকের আমানত বাড়লেও বিনিয়োগ কমছে সঞ্চয়পত্রে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকঋণে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাংক আমানতেও সুদের হার বেড়েছে। এজন্যই অন্যান্য খাত থেকে টাকা ব্যাংকে ঢুকতে শুরু করেছে। এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ অনেকটাই কমে যাবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই–জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৪৯ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার। একই সময়ে এ খাতে সরকারকে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ৭ মাসে সরকার এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদ/এমআই