অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদস্যরা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে একটি অর্থ প্রদান ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক সিনিয়র সহকারী ইউরি উশাকভ সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যম তাসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। খবর আরটি।
উশাকভ জানান, সিস্টেমটি ‘রাজনীতির বাইরে’ হবে এবং জাতীয় এজেন্ডা বা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের ফিয়াট (কাগুজে) মুদ্রার ওপর এটি নির্ভর করবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো ব্রিকস কাঠামোর মধ্যে একটি স্বাধীন সেটেলমেন্ট পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা, যা ডিজিটাল মুদ্রা ও ব্লকচেইনের মতো সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে।’
সিস্টেমটি যেকোনো রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও ব্যবসার জন্য উপযোগী হবে এবং এর জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো খরচেরও প্রয়োজন হবে না বলেও জানান তিনি। যদিও ইউরি উশাকভ সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। এছাড়া কবে নাগাদ এটি কার্যকর হতে পারে, সে সময়সীমার কথাও উল্লেখ করেননি।
উশাকভ জানান, ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে চায় ব্রিকস। রাশিয়া বর্তমানে জোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। এক্ষেত্রে ব্লকটিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্থানীয় বা নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন বাড়ানোর ব্যাপারে বারবার জোর দিয়ে আসছে মস্কো।
উশাকভ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মার্কিন ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্টের (সিআরএ) উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাব।’
‘ব্রিকস সিআরএ’ মূলত সদস্য দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি সাধারণ (কমন) রিজার্ভ। এটি জোটভুক্ত দেশগুলোয় তারল্য সংকট কিংবা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মতো তীব্র চাপের মধ্যেও নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে অর্থায়নের জন্য ডিজাইন করা হয়।
২০১০ শুরুর দিকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলেও ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা জোটটিতে যোগ দেয়। এতে সদস্যসংখ্যা হয় পাঁচ। সম্প্রতি জোটটির বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটেছে। চলতি বছর সৌদি আরব, ইরান, ইথিওপিয়া, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও নতুনভাবে ব্রিকসের সদস্যপদ গ্রহণ করেছে। এতে জোটটির সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-এ।
আকারে ছোট হলেও বৈশ্বিকভাবে বেশ প্রভাবশালী মনে করা হয় গ্রুপটিকে। ২০১৪ সালের হিসেবে, ব্রিকসের তৎকালীন পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। একই সময়ে জোটভুক্ত পাঁচ দেশের সম্মিলিত জিডিপির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ০৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির ২০ শতাংশের সমান। বর্তমানের কলেবর বাড়ায় এ পরিসংখ্যানও আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।
এদিকে গত এক বছরে ব্রিকস জোটের দেশগুলো ডলার ও ইউরো ব্যবহার থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। বিপরীতে তারা লেনদেন বাড়িয়েছে নিজ নিজ স্থানীয় মুদ্রায়। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমা মুদ্রা ও সুইফটের মতো পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক লেনদেন প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে রাশিয়ার জন্য। ওই সময় নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার বাড়ায় রাশিয়া। ২০২৩ সালের শেষে এসে ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার জাতীয় মুদ্রায় লেনদেন বেড়ে ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে, দুই বছর আগেও যা ছিল মাত্র ২৬ শতাংশ।