বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের এ ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে একটি বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দেন। দিনটি উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর পরাধীন থাকা যাবে না। বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তি দিতে হবে। এ চিন্তা থেকেই তিনি ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতার চেতনায়। প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। তারই একটি অংশ হচ্ছে ৭ মার্চ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে ৬৯ সালের অক্টোবর মাসে আমার বাবা লন্ডনে গিয়েছিলেন। লন্ডনে থাকার সময় ওইখানে টরকি নামক একটি জায়গা সমুদ্র সৈকত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সেখানে চলে যান কিছু আলোচনা করার জন্য। ফেরার পথে সেখানে কিছু মডেল ভিলেজ, সেই মডেল ভিলেজগুলো দেখেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি এ বাড়িঘর কেন দেখেন। আমাকে বলেছিলেন বুঝলি না আমাদের দেশ একদিন স্বাধীন হবে, আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামকে এভাবে সুন্দরভাবে সাজাবো। স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল। তিনি সেটা তখনও বলেননি তিনি কাজ করে গেছেন জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট পরিবেশ ও তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভাষণে কি বলতে হবে অনেকেই অনেক কথা বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিতে লাগলেন। কিন্তু আমার মা তখন আমার বাবাকে বলেছিলেন অনেকে অনেক কিছু বলবে, তোমার কারো কথা শোনার দরকার নেই। এদেশের মানুষের জন্য তুমি সারাজীবন সংগ্রাম করেছ, তুমি জানো কি বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সেই কথাই বলবে, আর কোনো কথা না। তখনকার পরিস্থিতিটা ছিল যে খবর এসেছিল আমাদের কাছে যে পাকিস্তানি মিলিটারি তখন হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ে তৈরি। এদিকে লাখো জনতা চলে এসেছে ছুটে কি নির্দেশনা দেবেন নেতা। মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তাদের আকাঙ্ক্ষার বাণী শোনানো আবার শত্রুর পক্ষকে বিরত রাখা। ৭ মার্চের ভাষণে কিন্তু সেটাই স্পষ্ট ছিল। তিনি কিন্তু সব কথা বলেছিলেন গেরিলা যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন পাশাপাশি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে বলেছিলেন সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি সেনারা তখন সেখানে কর্মরত ছিল তারা অনেক বই লিখেছে। তারা লিখেছে, উনি যে কি বলে গেলেন, আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোনো অ্যাকশনে নিতে পারলাম না। ৭ মার্চের ভাষণের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন বন্দি করে রাখা হয় তখন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেওয়া হয়। ওই মামলা চলাকালে আমাদের এখান থেকে অনেক সাংবাদিক, অনেককেই নিয়ে যায় সাক্ষী দেওয়ার জন্য। আমাদের একজন সাংবাদিক ছিলেন নাজমুল হক, বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন উনাকেও সাক্ষী দিতে নিয়ে যায়। আমার স্বামী অ্যাটমিক এনার্জিতে কর্মরত ছিলেন ওই সময় নাজমুল হকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে এবং সে বলল ৭ মার্চের ভাষণের শেখ মুজিব কি কথা বলেছিল, সেটার ব্যাখ্যা চেয়েছিল। এ ভাষণের ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতেই তাদের সময় গেছে। স্বাধীনতার পর তিনি যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলা হয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ। এমনকি ইতিহাস লিখতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম আসবে। একটা পেয়ে অনেক ছবি, আমার এখনো মনে আছে তার মাঝখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি সেটাকে কাগজ দিয়ে ঢেকে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে। কিন্তু ওই ছবিটা দেখানো যাবে না, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না সেটাই আজ প্রমাণ হয়েছে ৭ মার্চের ভাষণ আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। জয় বাংলা স্লোগান আজকে আমাদের জাতীয় স্লোগান। ৭ মার্চের এ ভাষণ শুধু বাঙালি বা আমাদের না এটা ইতিহাসে জেনে তারা ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে সে ভাষণগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবেই আজ স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো এ দিনে সে প্রতিজ্ঞা আমরা নিচ্ছি।
কাফি