টেপের পানিতে প্রায়ই ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা ভাসতে থাকে। যা খালি চোখে নিরূপণ করা অনেকটা দুরূহ ব্যাপার। আবার এই প্লাস্টিক কণার কিছু অংশ স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পানিকে পাঁচ মিনিট ফোটালে বেশির ভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিকই দূর হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফিরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নোয়া) দেওয়া তথ্য বলছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো ০.২ ইঞ্চির (৫ মিলিমিটার) চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের প্লাস্টিক কণা।
গবেষণা অনুসারে পানি পান করার আগে ফোটালে অন্তত ৯০ শতাংশ সম্ভাব্য ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক দূর করা সম্ভব।
শিল্পবর্জ্য এবং ভোগ্যপণ্যের এই ভাঙা অবশিষ্টাংশগুলো এড়ানো মোটামুটি অসম্ভব। এগুলো সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলজুড়ে থাকে। বোতলজাত জলের ভেতরে এবং এমনকি মানুষের মলের মধ্যেও এদের পাওয়া যায়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুসারে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে গবেষণা এখনো একেবারেই অপ্রতুল এবং যা হয়েছে তাতেও সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। এখন অবধি কিছু প্লাস্টিক ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। এদিকে পলিস্টাইরিনের মতো অন্যগুলো মানুষের কোষকে ধ্বংস করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি লেটারস জার্নালে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা পানীয় জল থেকে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক অপসারণের জন্য ব্যবহারিক ঘরোয়া পদ্ধতিগুলোর দিকে নজর দিয়েছেন। একটি বিষয়ে তারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন, তা হলো জলকে ফুটিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব কি না।
‘ফোটানো জল পান করা অনেক এশীয় দেশে একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। মানব স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী বলে ধরা হয়। কারণ, ফোটানো হলে পানির কিছু রাসায়নিক এবং বেশির ভাগ জৈবিক পদার্থ দূর হয়ে যায়, নতুন গবেষণাপত্রে লেখা হয়। তবে, কলের জলে এনএমপি (ন্যানো/মাইক্রোপ্লাস্টিক) অপসারণে ফুটানো কার্যকর কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়।’
পরীক্ষার জন্য গবেষকেরা ট্যাপের জলের এমন নমুনাগুলোর তৈরি করেছেন, যেখানে মাইক্রোপ্লাস্টিক পলিস্টাইরিন, পলিথিলিন এবং পলিপ্রোপিলিনের পাশাপাশি অন্য সাধারণ খনিজ পদার্থের উপস্থিতি আছে। গবেষকেরা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে জলের নমুনার ‘হার্ডনেস’ বা খরতা পরিবর্তন করেন। খর পানিতে উচ্চ মাত্রায় খনিজ উপাদান রয়েছে।
নমুনাগুলোকে ৫ মিনিট উত্তপ্ত করার পরে এবং সেগুলোকে শীতল করার জন্য রেখে দেওয়ার পর গবেষকেরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণে মারাত্মক হ্রাস লক্ষ্য করেন। হার্ডওয়্যাটার বা কঠিন জলের বেলায় মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পায়। কারণ, জলের ক্যালসিয়াম কার্বোনেট উচ্চ তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে গিয়ে প্লাস্টিকের কণাগুলোকে আটকে রাখে।
গবেষকেরা বলছেন, কঠিন ক্যালসিয়াম অপসারণের জন্য একটি সাধারণ কফি ফিল্টারের পাশাপাশি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কণাগুলো অপসারণের একটি সহজ উপায় হতে পারে।
অর্থসংবাদ/এমআই