রাজধানীতে ডিজিটাল মিডিয়া ফোরামের আয়োজনে কিউকম নিবেদিত ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে ডিজিটাল মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা, সার্টিফিকেট বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনস্থ আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে ছিল Private University Public Relations Officers Association- (PUPROA) প্রাইভেট ইউনিভাসির্টি পাবলিক রিলেশনস অফিসারস এসোসিয়েশন- (পুপরোয়া)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। তিনি বিশেষ প্রয়োজনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও এক বার্তায় সংগঠনের সাফল্য কামনা করেন। বার্তায় সব অতিথি এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ও স্পন্সরকারী সব প্রতিষ্ঠানকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গ্লোবাল টিভির সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল, চ্যানেল২৪ এর ডিজিটাল হেড রাজীব খান, প্রথম আলোর সিনিয়র ম্যানেজার (লিড) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা রুহুল আমিন রনি, গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের লেকচারার সরজ মেহেদী, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের হেড অব মিডিয়া নাহিদ জাহান, এডফিনিক্সের বিজনেস ও গ্রোথ লিড হোসনে মোবারক অপু, নিউজবাংলার এসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার জাকারিয়া হোসেন জয়, এক্সিলেন্স বাংলাদেশের সিইও বেনজির আবরারসহ অনেকেই।
কর্মশালায় স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল-টাইটেল স্পন্সরে কিউকম, গেজেট পার্টনার জি অ্যান্ড এম গেজেট অ্যান্ড মোবাইল কেয়ার, গোল্ড স্পন্সর টেনিশিয়ান, আইটি পার্টনার টেক্সোর্ট, নিউট্রিশন পার্টনার নিউট্রি প্লাস, কনটেন্ট প্রডাকশন পার্টনার স্টুডিও ভেলভেট, ক্রিয়েটিভ পার্টনার লিমিরেন্স ক্রিয়েসন্স, কো-স্পোন্সর দ্য প্রিমিয়াম হোমস লিমিটেড এবং উইসেলবিডি, নলেজ পার্টনার জেসিআই ঢাকা ওয়েস্ট।
কর্মশালায় ৫টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মিডিয়া ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞজন প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্মশালা পরিচালনা করেন।
কর্মশালায় প্রথমেই বক্তব্য দেন পারপেল পেচ বিজনেস লিড আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি তার পুরো প্রেজেন্টেশন প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জনসংযোগ বিভাগ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের আয়নার মতো। এই বিভাগ যত দক্ষ, প্রতিষ্ঠানটি তত উন্নত। সুতরাং দক্ষতার বিকল্প কিছু নেই।’
এরপর বক্তব্য দেন ক্লাইয়েন্ট পার্টনার মেটা অ্যালেফ লিড তিথি চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্যোশাল মিডিয়া সম্পর্কে যত জানা যাবে, ততই ভালোভাবে এই মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে। আপনাদের জানতে হবে কোন মাধ্যমে কত দ্রুত আপনার ম্যাসেজটি মানুষের কাছে পৌঁছায়। সেই অনুযায়ী আপনি বিজ্ঞাপন দেবেন। এতে আপনার সময় এবং অর্থ দুটোই সঠিকভাবে ব্যয় হবে। এজন্য এসব টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানা জরুরি।’ এসময় তিনি ডাটা-উপাত্তসহ স্লাইডের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেন।
এসময় বক্তব্য দেন খান আইটির ফাউন্ডার মো. ফারুক খান। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল মিডিয়ার এই আয়োজন অত্যন্ত সময়োপযোগী। এর মাধ্যমে আমাদের সবারই ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে। দক্ষ হয়ে উঠবো সবাই। এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছোট বা বড় যে কোনো ধরনের ব্যবসার জন্য এসইও মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব সর্বাধিক হওয়া উচিত। কেননা, এসইও কাজ করে আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ড তৈরিতে, যা এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে সব ব্যবসার মূল লক্ষ্য।’
কর্মশালায় চতুর্থ নম্বরে বক্তব্য দেন দৈনিক কালবেলার অনলাইন বিভাগীয় প্রধান পলাশ মাহমুদ। তিনি ভিন্নভাবে নিজেদের প্রচারের কলাকৌশল ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘সবাইতো চায় নিজেদের প্রচার। তবে, প্রচার কীভাবে কতটুকু হয়, সেটাই দেখার বিষয়। গতানুগতিকভাবে প্রচার করলে বর্তমানে নিজেদের তুলে ধরা যাবে না। প্রচার করতে হবে ভিন্নভাবে, যাতে মানুষের চোখে পড়ে। সেজন্য চিন্তা করতে হবে এবং তার প্রতিফলন দেখাতে হবে।’
এসময় নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন চ্যানেল২৪ এর ডিজিটাল হেড রাজীব খান। তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ে ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তাদের জন্য ইতিবাচক। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে ডিজিটাল মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা আরো আগেই প্রয়েজিন ছিল। এসব আয়োজন মিডিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে সেতু বন্ধন সৃষ্টি করবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সিনিয়র ম্যানেজার (লিড) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা রুহুল আমিন রনি। এসময় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে ডিজিটাল মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা একটি সুন্দর আয়োজন। এসব কর্মশালা এসময় বেশি প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা ডিজিটাল মিডিয়া সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, তত বেশি তারা এই মিডিয়ায় অভ্যস্ত হবেন।’
অনুভূতি জানান দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল। তিনি বলেন, ‘জানার কোনো শেষ নেই। দিন যত যাচ্ছে, জানার গণ্ডি তত বাড়ছে। আপডেট না থাকলে আপনি তরুণ হলেও পিছিয়ে পড়বেন।’ ডিজিটাল মিডিয়া ফোরামের এমন শিক্ষণীয় কর্মশালা অব্যাহত থাকুক বলে আশা করেন তিনি।
কর্মশালার শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন Private University Public Relations Officers Association-(PUPROA) প্রাইভেট ইউনিভাসির্টি পাবলিক রিলেশনস অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের -(পুপরোয়া) সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত। এসময় তিনি আগত সব অতিথি ও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। কৃতজ্ঞতা জানান স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগ ডিজিটাল পেরিয়ে স্মার্ট হয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে না পারলে পেছনে পড়ে যেতে হবে। তাই ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পাবলিক রিলেশন্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের এই কর্মশালা সময়ের সঠিক আয়োজন। এমন আয়োজন আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে একধাপ এগিয়ে দেবে।’
এসময় বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গ্লোবাল টিভির সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘যারা পাবলিক রিলেশনে রয়েছেন, তাদের কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি তৈরি করা। এখানেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টর সবচেয়ে বড় জায়গা হলো জিডিটাল মিডিয়া। এটাকে ভালোভাবে জানতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে। আজকের এই কর্মশালা সেটি আপনাদের পথ দেখাবে। আপনার যত রিসার্চ থাকবে আপনি তত এগিয়ে থাকবেন।’
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘ডিজিটাল মিডিয়া ফোরামের এই কর্মশালা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। মিডিয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের যোগাযোগের যতটুকু গ্যাপ ছিল, সেটি পূরণ হয়েছে। যোগাযোগ যত সহজ হবে, আদানপ্রদান তত বাড়বে।’ এসময় তিনি আয়োজক এবং সহযোগীদের এসব কর্মশালা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ উপস্থিত না থাকায় বিশেষ অতিথি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানকে প্রধান অতিথি ঘোষণা করা হয়। এসময় তিনি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ও অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘ভিন্ন না হলে কেউ কাউকে চেনে না। ব্যতিক্রম না হলে মেলায় হারিয়ে যেতে হয়। ইউটিউব-ফেসবুকে অনেক কনটেন্ট আছে, আপনারটাই মানুষ বেশি দেখবে কেন? আপনারটায় ব্যতিক্রম কী আছে, সেটি খুঁজবে মানুষ। বাজারে আরো ৭৫টা ব্র্যান্ড আছে, আপনারটা ৭৬ নম্বর হলে লাভ নেই। হারিয়ে যাবে।’
এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘ভাষা কোনো ব্যারিয়ার নয়, দরকার ভিন্নতা ও কোয়ালিটি সম্পন্ন। তাহলেই কেবল আপনার ব্র্যান্ড দাঁড়াবে। অপনি যত আপডেট হবেন, মার্কেটে তত ভ্যালু বাড়বে আপনার। পিছিয়ে থাকা যাবে না।’ এসময় তিনি বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। ডিজিটাল মিডিয়া ফোরামের সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমএফ প্রেসিডেন্ট দেলোয়ার হোসেন আগত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডিজিটাল সেক্টরের বিভিন্ন সসম্যা ও সম্ভাবনা গবেষণা করেছে। তারপর এমন একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। যেখানে এই সেক্টরের দেশসেরা এক্সপার্টদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখবো আমরা। সময় স্বল্পতার জন্য আমাদের অনেক অতিথিকে সেভাবে সময় দিতে পারিনি। দুঃখ প্রকাশ করছি। আজকের এই আয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশে অনেকখানি এগিয়ে দেবে।’
এসময় তিনি অনুষ্ঠান সহযোগী Private University Public Relations Officers Association-(PUPROA) প্রাইভেট ইউনিভাসির্টি পাবলিক রিলেশনস অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনকে -(পুপরোয়া) ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। ডিজিটাল মিডিয়া ফোরামের পাশে সবাইকে এভাবে থাকার অনুরোধ জানান।
কাফি