বিটকয়েনে বিনিয়োগের নামে স্বর্বসান্ত হচ্ছে যুবক শ্রেণি। অনলাইনে নানান প্রলোভন আর প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খোয়াচ্ছেন অহরহ। এমনটা ঘটেছে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার আসাদুজ্জামান (ছদ্মনাম) নামের এক ফ্রিল্যান্সারের সাথে।
বেশ কিছুদিন আগে আসাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত নাম্বারে একটি বাংলাদেশী নাম্বার থেকে কল আসে। ওপাশ থেকে শেখ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া এক নারী তিনি অনলাইনে উপার্জন করতে আগ্রহী কিনা? কাজ অতীব সহজ, ‘ইসরাত জাহান’ নামে একজনের ইউটিউব চ্যালেন সাবস্ক্রাইব করা। সহজ কাজে উপার্জনের সুযোগ লুফে নেন আসাদ। একবারের কাজের জন্য তিনি ২০০ টাকা সম্মানি পান। সেখান থেকেই ইসরাত নামের একজনের সাথে টেলিগ্রামে যুক্ত হোন।
টেলিগ্রামে যুক্ত হতেই ইসরাত ১০০ টাকার বিনিময়ে ‘ইউটিউব টাস্ক’ নামে একটি গ্রুপে যুক্ত করেন। যেখান থেকে উপার্জনের আরও রিসোর্স পাওয়া যাবে। নতুন এই গ্রুপে সম্মানীও কম না, ৫টা চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করলে ৫০০ টাকা! এখান থেকে একদিনে ৪৫০০ টাকা আয় করেন আসাদুজ্জামান। তারপর সাজানো হয় উপার্জনের নামে নতুন প্রতারণার জাল। যার নাম দেওয়া হয় ‘এডভ্যান্স বেনিফিট টাস্ক।’ যেখানে ১৬০০ টাকা বিনিয়োগ করলে কোন পরিশ্রম ছাড়াই ২৪০০ টাকা পাবেন বিনিয়োগকারী। এজন্য যুক্ত হতে হবে শারমিন নামে এক ব্যক্তির সাথে।
প্রতারণার ফাঁদের নতুন জগতে পা রাখতে গিয়ে আসাদুজ্জামান জানেন, তাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্ট নামে নতুন হিসাব খুলতে হবে। যেখানে লেনদেন হবে বিটকয়েন। ১৬০০ টাকার বিনিময়ে বিটকয়েন কিনলে আসাদের একাউন্টে জমা হবে ২৪০০ টাকা, যা বিকাশের মাধ্যমে উত্তোলনযোগ্য। কথা মতো, ২৪০০ টাকা হাতে পাওয়া আসাদ পরবর্তীতে ৫৩২০ টাকা বিনিয়োগ করেন। যার বিনিময়ে তিনি ৬৯১৮ টাকা পাবেন।
এদিকে বিনিয়োগের নতুন ধাপ পূরণ করা আসাদকে যুক্ত করা হয় নতুন আরেকটি টেলিগ্রাম গ্রুপে। যেখানে আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন বিনিয়োগকারী পরিচয় দেওয়া আরও তিন সদস্য। নতুন গ্রুপে যুক্ত হয়ে আসাদ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা পাঠান। কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি। তার পাঠানো টাকার সংখ্যাকে ভুল দাবি করে কর্তৃপক্ষ। একইসাথে তার ভুলের কারণে বাকিদের অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার দোষ চাপানো হয়। পাশাপাশি বাকি সদস্যরাও তাকে গালিগালাজ ও দোষারোপ করতে থাকেন। সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবক ৬১ হাজার ৩০০ টাকা পাঠান আসাদ। কিন্তু সমস্যা এখানে মিটেনি।
আসাদকে ফের গালমন্দ করা হয়। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে তার কাছ থেকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ১-২ লক্ষ টাকা করে মোট ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। পরবর্তীতে তিনি খিলগাঁও থানায় এ বিষয়ে মামলা করলে বিষয়টি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা ছায়া তদন্ত করে। এরপর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, পঞ্চগড়, দিনাজপুর জেলা থেকে মোট ০৮ (আট) জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে চক্রটি। এভাবে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে তারা।
এদিকে অনলাইনে বিনিয়োগের নামে প্রতারণা চার নির্দেশনা দিয়েছে সিআইডি। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. মোবাইল কল, হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম মেসেজের মাধ্যমে কেউ অনলাইনে কাজ করার কথা বললে এড়িয়ে চলুন।
২. অনলাইনে কাজের বিনিময়ে টাকা উপার্জন করুন কিন্তু বেশী উপার্জনের আশায় অনলাইনে টাকা ইনভেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট অথবা এমএফএস একাউন্ট খুলে অন্য কাউকে দিবেন না।
৪. নিজে সচেতন থাকুন অন্যকে সচেতন করুন।
অর্থসংবাদ/এমআই