পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য পূর্ব ঘোষণা বাধ্যতামূলক করেছে। তবে এই আইনের তোয়াক্কা না করেই কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার ক্রয় করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। গোপনে কম দামে শেয়ার ক্রয় করে তা আবার সর্বোচ্চ দামে ধরিয়ে দিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এতে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এদিকে এমন কান্ডকে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা বলছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) ও বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এমারেল্ড অয়েলের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ঘোষণা ছাড়াই কম দামে শেয়ার ক্রয় করে বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৮৮ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একপর্যায়ে শেয়ারের দর কমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা শেয়ার ফের ঘোষণা ছাড়াই ক্রয় করে কোম্পানির একাধিক উদ্যোক্তা ও পরিচালক। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৬০ শতাংশই উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট রয়েছে।
এদিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দাবি তাদের বড় ঠকানো হয়েছে। তাদের দাবি, ঘোষণা ছাড়া কম দামে শেয়ার ক্রয় করে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফের কম দামে ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার ক্রয় করে আবারও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর চক্রান্ত চলছে।
সূত্র মতে, গত এক মাসের মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার ধারণে বিশাল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশের শেয়ার ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিশাল পরিমাণে কমেছে। তবে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধির পেছনে কোনো তথ্য নেই দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৩ তারিখে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিলো ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর ৩১ জানুয়ারি,২০২৪ তারিখে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৬১ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এছাড়া, ৩১ ডিসেম্বর,২০২৩ তারিখে কোম্পনিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিলো ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিলো ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর গত ৩১ জানুয়ারি,২০২৪ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৪২ শতাংশে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে ১৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এছাড়া, বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীনসহ মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের দিয়ে এ লভ্যাংশ অনুমোদনও করিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ লভ্যাংশের সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধই করা হয়নি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডদের অনুমোদনের ৩০দিনের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে হয়। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বিএসইসির জারি করা আদেশে বলা হয়, অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে লভ্যাংশ জমা করতে হবে। অন্যথায় জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আসবে কোম্পানিটি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের পরও সেই লভ্যাংশের অর্থ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে পাঠায়নি খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির লভ্যাংশের এ অর্থ পাঠানোর শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি।
এদিকে গত ৩০ জুন,২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীনসহ মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যার রেকর্ড ডেট ছিলো একই বছরের ২৯ নভেম্বর। আর এজিএম ছিলো ২৭ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির এজিএমে পূর্ববতী উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ যাদের শেয়ার ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ব্যতীত সকলের জন্য এ লভ্যাংশ অনুমোদিত হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশের এ টাকা বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দেয়নি। এ অবস্থায় লভ্যাংশ না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও কোম্পানিটির শেয়ারদর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।