বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের টাইমলাইন এখন চূড়ান্ত হয়েছে, ফলে শিগগিরিই একটি শক্তিশালী এলডিসি ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যের জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্থাপন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ।
তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর, অ্যান্টি-ডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি হল দেশীয়পণ্য এবং তাদের বাজারগুলিকে রক্ষা করার মূল হাতিয়ার। সেই সময়ে বিদেশী পণ্যের আগ্রাসন থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হবে অ্যান্টিডাম্পিং, কাউন্টারভেইলিং এবং সেফগার্ড ডিউটি।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর পল্টন টাওয়ারস্থ বিপিজিএমইএ কনফারেন্স রুমে “এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অব বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড অপরচুয়েনিটিজ” শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সার্ক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ আমিন হিলালী।
অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসাবে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের ডেপুটি চীফ মাহমুদুল হাসান, বিডার স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট এর পরিচালক ড. মোঃ হুমায়ুন কবির খান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারী (পলিসি) সলিম উল্লাহ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক্সপোর্ট উইং এর যুগ্ম সচিব মিস নারগিস মুর্শিদা। মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বিপিজিএমইএ সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, শাহেদুল ইসলাম হেলালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, বিপিজিএমইএ’র সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, গুরুত্বপূর্ণ সদস্যবৃন্দ এই সেমিনারে অংশগ্রহন করেন।
সেমিনারে মূল নোট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২১ সালে স্নাতকের মানদন্ড পূরণ করেছে এবং ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্নাতক হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে। স্নাতকের পর আমরা উন্নত এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশে শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবো, বেশিরভাগ উন্নত দেশে জিএসপি সুবিধা হারাবো, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং অন্যান্য ধরনের সহায়তা হারাবো। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য, দেশীয় শিল্পের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য শুল্ক ছাড়পত্রের পদ্ধতি সহজ করার মাধ্যমে বাণিজ্য ব্যয় কমাতে, বিশেষ করে ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য রাজস্ব সংহতি বাড়ানো, সরকারি ও বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই মানব সম্পদে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এফডিআই, ট্যারিফ, শ্রম, পরিবেশ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নত ও বৈচিত্র্যময় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কম রিসোর্স ও বেশী মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সকল ক্রাইটারিয়া পূরণে করেছে এবং আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরে গ্রাজুয়েশন লাভ করবে। আর গ্রাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মেকাবেলার জন্য সকলকে কাজ করতে হবে। তিনি বতর্মান সরকারকে ব্যবসায়ী বান্ধব বলে উল্লেখ করে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ট্যারিফ পলিসি করেছে এবং এটি অত্যন্ত চমৎকার। এর আওতায় দেশীয় শিল্প প্রতিরক্ষণে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সঠিক ট্যারিফ পলিসির কারণেই ব্যবসা বাণিজ্য সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প প্রতিরক্ষণে সরকার ওয়াদাবদ্ধ। আর দেশীয় শিল্পের বিকাশ না হলে সবকিছু অর্থহীন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, আমরা এনবিআরকে ট্যারিফ ঠিক রাখার জন্য যা যা কাগজ দরকার তা প্রদান করি। তিনি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় উৎপাদনশীলতা এবং কমপিটিটিভনেস বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হিলালী বলেন, প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে নিতে এনবিআরকে সৃজনশীল পলিসি প্রণয়ন করতে হবে। এনবিআরের ট্যাক্স কালেকশন সিস্টেমের উন্নত করতে হবে। বর্তমানের অদূরদর্শী ট্যাক্স সিস্টেম এর কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিলীন হয়ে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে এসসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর ইইউ কমপ্ল্যায়েন্ট ছাড়া কোন পণ্য কিনবে না। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যয়বহুল হয়েছে। তাই ব্যবসাকে এই বাস্তবতায় পরিচালিত করতে প্রস্তত করা আবশ্যক। কারখানার কমপ্লায়েন্সের ওপর জোর দিয়ে রপ্তানি বহির্ভূত কোম্পানিগুলোকেও এই তালিকায় আনতে হবে। তিনি কমপ্ল্যায়েন্স বিষয়ে সরকারের আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। প্লাস্টিকের মতো সম্ভাবনাময় ১০/১২টি সেক্টরকে বেইজড করে কাজ করার উপর জোর দেন।
অর্থসংবাদ/এমআই