ক্যাটাগরি: অর্থনীতি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রামীণ নারীদের হিসাব বেড়েছে ২৬ শতাংশ

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষই এই মাধ্যমের সেবায় বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে। গত এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রামীণ নারীদের হিসাব বেড়েছে ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামের নারীদের এজেন্টে হিসাব সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৮১৬টি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে হিসাব ছিলো ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮৪টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েছে ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩২টি বা ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীদের হিসাব সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ১৮ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিসাব গ্রামের নারীদের, যার সংখ্যা ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৭টি। আর শহরাঞ্চলের নারীদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ২৪১টি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু থেকেই গ্রামীণ মানুষের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় তারা ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এতে গ্রামীণ মানুষ সহজেই মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এরফলে সেখানকার নারীদের অংশগ্রহণও ব্যাপকহারে বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতের বাকি নিয়ম মেনে এজেন্ট ব্যাংকিং এগিয়ে যেতে পারলে গ্রামীণ অঞ্চল সামষ্টিক অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রাখবে।

আলোচ্য সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত জমা পড়েছে ৩৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময় পর্যন্ত এই খাতে আমানত ছিল ২৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৬ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৯৩ শতাংশ আমানত বেড়েছে। অবশ্য আমানত বৃদ্ধিতে গ্রামের মানুষের অবদান বেশি। শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষের ডিপোজিট হিসাবের সংখ্যাও অনেক বেশি।

গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৫৭টি, আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬০১টি। ২০২২ সালের একই সময়ে এজেন্টের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২২৬ এবং আউটলেট ছিল ২০ হাজার ৮৩৬টি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এজেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৫৩১টি এবং আউটলেট বেড়েছে ৭৬৫টি। গ্রামীণ অঞ্চলে এসব ব্যাংকিং শাখা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে লেনদেন, চাঙা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

ব্যাংকিং শাখার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে দেশে ২০১৪ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্ভাবন ঘটে। ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির কাছে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা পৌঁছানোই হয়ে উঠে এই ব্যাংকিংয়ের মূল্য উদ্দেশ্য। তাতে যেমন ব্যাংকের অতিরিক্ত শাখা নির্মাণ, অবকাঠামো ব্যয়সহ নানা খরচ কমেছে; তেমনি দেশজুড়ে বেড়েছে ব্যাংকিং সহজলভ্যতা। ফলে হাতের নাগালে পাওয়া ব্যাংকিং সেবায় বেড়েছে গ্রামীণ মানুষের আমানত।

এদিকে প্রবাসীরা এখন খুব সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন। প্রবাসী পরিবারদের দোরগোড়ায় দ্রুত রেমিট্যান্স পৌঁছে যাচ্ছে খুব সহজেই। এর ফলে আগের প্রান্তিকের তুলনায় এই ব্যাংকিং মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও বাড়ছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার