ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজারে শরীয়াহ ভিত্তিক প্রোডাক্ট আনতে কাজ করছে বিএসইসি: শেখ শামসুদ্দিন

পুঁজিবাজারে ইসলামিক শরীয়াহ ভিত্তিক প্রোডাক্ট আনতে কাজ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাজ করছে বলে জানিয়ে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে তেমন কোনো ইসলামিক শরীয়াহ ভিত্তিক প্রোডাক্ট নেই। তাই মধ্যপ্রচাচ্যের বিনিয়োগকারীরা এসব প্রোডাক্টের বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে পারি না। তবে বিভিন্ন ধরনের শরীয়াহ ভিত্তিক প্রোডাক্ট বাজারে এসেছে। বাজারে সুকুক বন্ড আনা হয়েছে। যেহেতু এসব প্রোডাক্ট আসা শুরু আসছে, সামনে এগুলো আনতে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন।

রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংক প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (পিবিআইএল) নতুন চারটি প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছে। এ উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার এসব কথা বলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্টকোস্ট গ্রুপের কর্ণধার ও প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক আজম জে চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান সি কি কে মুস্তাক আহমেদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও সৈয়দ এম ওমর তৈয়ব।

এসময় মহিলাদের জন্য ও এসএমই খাতের বিভিন্ন বন্ড তালিকাভুক্ত করার জন্যও কমিশন কাজ করছে বলে জানান বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ব্যাংক খাতের নন-পারফর্মিং লোন নিয়ে কথা বলি। তবে এ খাতটির অনেক অবদান রয়েছে। এরপরেও আমাদের আরও অনেক সোর্স খুঁজতে হবে। আমরা এই ৫০ বছরে যা অর্জন করেছি তাতে থেমে থাকিনি। আমরা আরও বড় হতে চাই। আর লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের দরকার আছে।

প্রাইম ব্যাংক পিএলসির পরিচালক আজম জে. চৌধুরী বলেন, আমাদের এখন কোনো নেগেটিভ ইক্যুইটি নেই। নেগেটিভ ইক্যুইটি বাজারের সকলের জন্য একটি বড় সমস্যা। আর এক্ষেত্রে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের এমডি যে পরিবর্তনগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে চেয়েছেন তা প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, এখন ইউএসএতে প্রতিদিনই একটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা আমার মনে হয় খুবই স্বাভাবিক। আপনি ব্যাংক চালাতে জানবেন না ব্যাংক খুলবেন তবে তো ব্যাংক বন্ধ হবেই৷ আমরা চাই এ ধরণের ঘটনা আমাদের দেশে এড়াতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসাথে কাজ করুক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানে কিভাবে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে হবে।

আজম জে চৌধুরী বলেন, আমদের বাজারে ভালো স্টক আনতে হবে। বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রতিদিনই এই কথাটির সম্মুখীন হন বলে আমি মনেকরি। অনেক ভালো কোম্পানি বাজারে আসতে চায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা আসতে পারছে না। যখন ভালো কোম্পানি বাজারে আসবে তখন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য। আমি তাই নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে অনুরোধ করবো বাজারে তালিকাভুক্তকরণ পদ্ধতির জটিলতা কমিয়ে এটিকে আরও সহজ করার জন্য যেন বাজারে ভালো ভালো শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরও বলেন, প্রাইম ইনভেস্টমেন্ট বাজারে কিছু সুন্দর প্রোডাক্ট এনেছে। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এই প্রোডাক্টগুলো বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক হবে বলে আমি মনে করি।

প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান বলেন, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে মানুষদের আনতে হবে। একইসঙ্গে এখানে আস্থা তৈরি করতে হবে। এই মার্কেটে আস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীরা প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমরা সেভাবেই সবাইকে উদ্ভুদ্ধ করবো। তরুণদের আয় বিনিয়োগের মধ্যে আনতে হবে। এছাড়া গরীব মানুষদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে সেটাও বিনিয়োগের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। নারীদের জন্যও আমরা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন সময় প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের এমডি বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। এই গ্রোথের ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাজার সম্পর্কে বেশ কিছু গুজব আছে। এসব গুজব পুরোপুরি সত্যি না। সুতরাং পুঁজিবাজার সম্পর্কে গুজব দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, মার্কেটের বেনিফিটস নিয়ে কথা বলা দরকার। আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যেতো। তবে সেখানে বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফ্রী। সুতরাং এক্ষেত্রে বাজারে আসার সুবিধা রয়েছে। পুঁজিবাজারের মতো সুবিধা আর কোথাও বিনিয়োগ করে পাওয়া যাবে না। আমরা চাচ্ছি বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনতে। এজন্য চারটি প্রোডাক্ট আমরা এনেছি। এখানে বিভিন্ন বয়স ও আয়ের মানুষেরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। কারণ আমরা বয়স আয়ের ভিন্নতা মাথায় রেখেই এই পণ্যগুলো সাজিয়েছি।

এছাড়াও তিনি বলেন, প্রবাসীরা পৃথিবীর যেকোনো যায়গা থেকে একাউন্ট খুলতে পারে। সরকার রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দিচ্ছে। যদি ইনভেস্টের জন্য প্রবসীরা যে অর্থ নিয়ে আসবেন তাতেও প্রণোদনা দিতে পারলে অনেক সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক মার্জ করতে যাচ্ছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি কোম্পানি মার্জারের সুযোগ আছে।

জানা গেছে, পিবিআইএল যে প্রোডাক্টগুলো এনেছে তা হচ্ছে ব্যাংক ডিসক্রিশিয়নারি প্রোডাক্ট। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে এই ধরনের প্রোডাক্ট নেই বললেই চলে।

উল্লেখ্য, ব্যাংক ডিসক্রিশিয়নারি প্রোডাক্ট বলতে এমন বিনিয়োগ হিসাবকে বোঝানো হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার যাচাই-বাছাই ও সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রাহকের জন্য শেয়ার কিনে থাকে। প্রতিষ্ঠান তার রিসার্চ, অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের হয়ে শেয়ার কেনা-বেচা করে থাকে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে যাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা ও অভিজ্ঞতা কম এবং নানা কারণে হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার সুযোগ কম-তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব প্রোডাক্ট সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার