আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে তামার দামে। সবশেষ শুক্রবার তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধি দেখেছে ধাতুটি। মজুদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ চীনে অর্থনীতিতে গতি ফেরার সম্ভাবনায় তামার দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে (এলএমই) তামার তিন মাস সরবরাহ চুক্তির দাম আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৮ হাজার ৪০৭ ডলার ৫০ সেন্টে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর এটিই সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধি।
চলতি মাসের এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। কারণ চন্দ্রবর্ষের ছুটি উপলক্ষে বাজারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছিল ধীর। তবে ছুটি শেষ হওয়ায় ফের ধাতুটির বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
ধাতুটিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের অন্যতম নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। বৈদ্যুতিক উপকরণ ও শিল্প খাতের যন্ত্রাংশ তৈরিতে ধাতুটির ব্যবহার ব্যাপক। বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাসও তামার চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় প্রভাব রাখছে।
চীন দেশটির অর্থনীতিকে গতিশীল করতে উদ্যোগ নেয়ায় তামার দাম অব্যাহত বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রপার্টি খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হলে তামার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে।
গত বছর চীনের বেসরকারি খাত ব্যাপক চাপের মুখে ছিল। তার ওপর সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে ভোক্তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়। তবে এ বছর সরকার অর্থনীতিতে স্থিতি ফেরাতে জোর দেয়ায় এ পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে মোড় নেবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলএমইতে নিবন্ধিত ওয়্যারহাউজগুলোয় তামার মজুদ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫২৫ টনে, যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। মজুদ কমে যাওয়ার কারণেও ধাতুটির দাম বাড়ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিগুলোয় মূল্যছাড়ের হারও কমছে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধের অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে জোর দিচ্ছে বর্তমান বিশ্ব। ফলে এ খাতে অপরিহার্য ধাতু তামার চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে। কিন্তু বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের কারণে এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের কারণে আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে দাম। আগামী দুই বছরের মধ্যে তামার বৈশ্বিক দাম ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
বিশ্বজুড়ে তামার নতুন খনিগুলো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। নিম্ন গ্রেড, অনুমোদন পেতে কঠোর প্রক্রিয়া, পরিবেশবাদীদের আন্দোলন, সামাজিক ও সরকারি নানা ইস্যু এবং ঊর্ধ্বমুখী করের মতো বিষয় খনিগুলোর উত্তোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে ধাতুটির সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ তীব্র হচ্ছে।