ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইকোনোমিস্টের অঙ্গসংস্থা ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) সূচকে ১১ ধাপ নেমে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের আখ্যা পেয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার এক প্রতিবেদেন এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দু’টি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক পরিচালনা করে আসছে ইআইইউ। পাঁচটি মানদণ্ড— নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় এই সূচক।
এই পাঁচ মানদণ্ডের ওপর ভিত্তিকে করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র, স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণি রয়েছে ইআইইউ সূচকে।
এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে।
ইআইইউ’র ২০২৩ সালের সূচকে পাকিস্তানের স্কোর ৩ দশমিক ২৫ পয়েন্ট, যা আগের বছর ২০২২ সালের চেয়ে দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কম। এ কারণেই ২০২২ সালে যেখানে মিশ্র গণতন্ত্রের সারিতে ছিল পাকিস্তান, ২০২৩ সালে সেই পাকিস্তান নেমে এসেছে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায়।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ইআইইউ বলেছে, গত এক বছরে নির্বাচনে কারসাজি এবং সরকারের অকার্যকারিতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংকুচিত হয়েছে দেশটির বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
বিশ্বের যে ১৬৫টি দেশকে ভিত্তিকে করে পরিচালিত হয় ইআইইউ সূচক, তার মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশের সংখ্যা ২৮টি। এই ২৮টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানই একমাত্র দেশ, যেটি মিশ্র গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের সারিতে নেমেছে।
এমনকি ২০০৬ সালে যখন এই সূচক শুরু হয়, সে সময়ে পাকিস্তানের যে স্কোর ছিল— ২০২৩ সালে তার চেয়েও খারাপ স্কোর করেছে দেশটি। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৩ দশমিক ৯২।
পাকিস্তানের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা পাকিস্তান লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির (পিলডাট) কর্মকর্তা বিলাল মেহবুব ইআইইউ’র এই ফলাফলকে ‘হতাশাজনক’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এই ফলাফল খুবই হতাশাজনক। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম এত নিম্ন স্কোর করল পাকিস্তান। অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তানের গণতন্ত্রের অবস্থা সামরিক শাসনের চাইতেও খারাপ।’
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি ছিল। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।